Editorial

বন্ধু মোদীকে জোড়া ধাক্কা ট্রাম্পের

সম্পাদকীয় বিভাগ

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গলাগলি আর কোলাকুলির বন্ধু স্বঘোষিত বিশ্বগুরু নরেন্দ্র মোদীকে আর একটি রাম ধাক্কা দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন আমেরিকায় ভারতের পণ্য রপ্তানি করতে হলে ২৫ শতাংশ শুল্ক গুণতে হবে। এবং সেটা কার্যকর হবে আগস্ট মাসের প্রথম দিন থেকেই। এখানেই থামেননি। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো চাপিয়েছেন জরিমানাও। কেন ভারত রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল এবং অস্ত্র কেনে তার জন্য দিতে হবে জরিমানা। তবে সেটা কতটা খোলসা করেননি। এমন বড় মাপের শুল্ক বোমার ফলে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য বড়সড় সঙ্কটে পড়তে চলেছে। তাতে ধাক্কা খাবে সামগ্রিক অর্থনীতি। ভারতের বিরুদ্ধে বন্ধু ট্রাম্পের এমন এক আগ্রাসী পদক্ষেপের পরও মোদী যথারীতি নীরবতা পালন করছেন।
গত তিন মাস ধরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মোদী সরকারকে নাজেহাল করে চলেছেন ট্রাম্প। পহেলগাম জঙ্গি হামলার বদলায় ভারতের অপারেশন সিঁদুর যখন মধ্য গগনে তখন আচমকাই তা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধু হবার কয়েক ঘণ্টা আগে খোদ ওয়াশিংটন থেকে ট্রাম্প দুনিয়াকে জানিয়ে দেন তাঁর হস্তক্ষেপে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাম্প এমন কথাও বলেন যদি তারা যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হয় তাহলে দু’দেশের সঙ্গে কোনও রকম বাণিজ্য চুক্তি করবে না আমেরিকা। ট্রাম্প বুঝিয়ে দেন বাণিজ্যের হুম‍‌কিতেই নাকি কাজ হয়েছে। তারপর থেকে প্রায় ৩০ বার ট্রাম্প এই একই দাবি জোর গলায় করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বন্ধু মোদী একবারের জন্যও ট্রাম্পের এই দাবির সরাসরি বিরোধিতা বা প্রতিবাদ করেননি। জোর গলায় বলেননি ট্রাম্প মিথ্যে কথা বলছেন।
ট্রাম্পের আচরণে তিন মাস ধরে অপদস্থ ও অপমানিত হচ্ছেন মোদী। অথচ তিনি মুখ খুলছেন না। মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এবার ছুঁড়েছেন শুল্ক বোমা। এবারও মোদী চুপ।
গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকার সঙ্গে চলছে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা। কয়েকদিন আগে আমেরিকায় পঞ্চম রাউন্ডের আলোচনা শেষ হলেও কোনও সমঝোতা সূত্র বের হয়নি। আমেরিকা চায় ভারতে কৃষিপণ্যের বাজার ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আমেরিকার জন্য খুলে দেওয়া হোক। কৃষক সমাজের উপর তার ভয়ঙ্কর প্রভাবের কথা ভেবে এখনো মোদীরা আত্মসমর্পণ করেনি। তবে কতদিন চাপ সহ্য করতে পারবেন সন্দেহ আছে। এর আগে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারতকে আমেরিকা থেকে তেল কেনা এবং অস্ত্র কেনা বাড়াতে বলেছিলেন। ভারত ধীরে ধীরে সেদিকে ঝোঁকা শুরুও করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প সবকিছু চটজলদি চান। তাঁর শর্ত না মানলে তিনি যে বন্ধুকেও রেয়াত করেন না মোদী তার প্রমাণ। এর আগে ভারতের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ৫০ শতাংশ এবং মোটর গাড়ি ও যন্ত্রাংশের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বলবৎ করা হয়ে‍‌ছে। এবার বাকি সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপল। রাশিয়া জরিমানা ১০০ শতাংশ করার ইঙ্গিত আগে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কত হবে বলা মুশকিল।
লক্ষণীয় অন্যান্য দেশের পণ্যে যে হারে ট্রাম্প শুল্ক চাপিয়েছেন তার থেকে বিশেষ কোনও সুবিধা পায়নি বন্ধু মোদীর দেশ। একমাত্র চীনের পণ্যে শুল্ক ভারত থেকে বেশি ৩০ শতাংশ। কিন্তু ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ১৯ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৯ শতাংশ, জাপানে ১৫ শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ১৫ শতাংশ এবং ব্রিটেনে ১০ শতাংশ। এই সবের কোনও দে‍‌শেই মোদীর মতো বন্ধু নেই ট্রাম্পের।

Comments :0

Login to leave a comment