গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
রবি-ছবি
সৌরভ দত্ত
চল –চল–পাঠশালে যাই।ছোটো খোকা বলে অ-আ শেখেনি সে কথা কওয়া।একমনে আওড়ে চলেছে গুঞ্জা।আজ ঠাকুরের জন্মদিন। বিকালে বৈঠকী আড্ডা বসবে ঘোষালের সদরে। যুদ্ধের সাইরেন।সহজপাঠের অক্ষরগুলো কেমন ছবি তৈরি করছে।মা পিঁড়েতে বসে উনুনে জ্বাল ঠেলছে।গুঞ্জা মাকে জিজ্ঞেস করা এই ছড়াগুলোর মানে কি মা! হ্রস্ব উ দীর্ঘ ঊ ডাক ছাড়ে ঘেউ ঘেউ। কিসের ডাক মা–ভুলো কুকুরের।মা বলে–অত কিছু জানি না বাবা…
আমরাও যখন ছোট ছিলাম চাটাই বিছিয়ে পাঁচ ভাইবোন মিলে সুর করে তোর মতো সহজপাঠ পড়তাম।এর আগে আমার মা-দিদিমারাও পড়েছে।এটা যেন একটা লেখাপড়ার গোড়ার দিকের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবই। সহজপাঠের গল্প দৃশ্য হারিয়ে যায়নি।এটা তো রবি ঠাকুরের লেখা।আঁকা গুলো কি সুন্দর না মা!–গুঞ্জা পড়ে আর বইয়ের পাতার সাদাকালো ছবিগুলোতে হাত বোলায়।ছবি গুলো সে যেন বাড়ির গ্রামের পথের অনাচে-কানাচে দেখেছে।এক মনে পড়ে চলে–ক খ গ ঘ গান গেয়ে জেলে ডিঙি চলে বেয়ে।তার চোখে ভাসে কেদোর মাঠের বিলে জেলেদের শালতি চাপার কথা। গরমে স্কুল এর ছুটি পড়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। মা বলে দেখ–আকাশে বিমান পাক খাচ্ছে ;যুদ্ধের সাইরেন বাজছে।পড়ে নে তাড়াতাড়ি। ঘোষালের বাড়ি রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে তোর দাদু ও আবৃত্তি করবে। কচিকাঁচার দল সাজুগুজু করে ছন্দের তালে নাচবে।গুঞ্জা বলে আমিও আবৃত্তি করব–আতা গাছে তোতা পাখি।বেলা পড়ে আসছে , আমগাছের উপর কমলা রোদ্দুরের আভা পড়েছে। ঘোষালের বৈঠক খানায় ঠাকুরের মাটির মূর্তিতে টগর ফুলের মালা ঝুলছে। পাড়ার সবাই একে একে এসে উপস্থিত হচ্ছে। মধুর গান বাজছে–গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে…
Comments :0