ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের মতো জনতার একগুচ্ছ দাবিকে সামনে রেখে ২০ মে’র ধর্মঘটে শামিল হচ্ছে মেডিক্যাল অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়ন। শনিবার কলকাতায় মহাজাতি সদনে সেমিনার করেছে ওষুধ বিপণন কর্মীদের এই সংগঠন।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলি ২০ মে সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সেই ধর্মঘটকে সমর্থন করে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এন্ড সেলস্ রিপ্রেজেন্টেটিভস্ ইউনিয়ন ধর্মঘটে শামিল হবে। সংগঠনের মূল দাবিগুলি হলো, সমস্ত ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কাৰ্যকরী নীতি গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামকে শূন্য জিএসটি’র আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের ৫% অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। বাজারজাত সকল ওষুধের গুণমান পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে এবং ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুককারী ও সরবরাহকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
এদিন ‘সুলভ মূল্যে সঠিক মানের ওষুধ আমাদের অধিকার’শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন এফএমআরএআই’র সাধারণ সম্পাদক পার্থ রক্ষিত, চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী, পিআরসি’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফুয়াদ হালিম, এসএফআই’র সর্বভারতীয় নেতা সৃজন ভট্টাচার্য ও রাজ্যের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম।
মহম্মদ সেলিম বলেন, "আমাদের মৌলিক চাহিদা শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান কর্মসংস্থান। ভারত, চীন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান শ্রীলঙ্কা সব দেশের প্রয়োজন।’’ তিনি বলেন, ‘‘মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন সংগ্রাম তৈরি করা এবং বৃহত্তর অংশের মানুষকে সেই আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত করেই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল এন্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়ন এর যে দাবিগুলি রয়েছে শুধু সেখানে ওষুধ শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁদের দাবি নয়, শুধু চিকিৎসকদের দাবি নয়, বৃহত্তর যে সমাজ যেখানে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সাধারণ মানুষও রয়েছেন, তাঁদেরও এই দাবির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। যেভাবে মানুষের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় প্রতিদিন বাড়ছে তাকে এক সূত্রে বেঁধে আন্দোলন সংগ্রাম তৈরি করতে হবে।’’
চিকিৎসক আন্দোলন নেতা সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "জাল ওষুধ ও ভেজাল ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন কথা হচ্ছিল এবং সেখানে মূলত চিকিৎসক ও সরকারি হাসপাতালের সুপারদের ওপর দায় চাপানো হয়। কিন্তু একটি হাসপাতাল সুপার জখন কোনও ওষুধের ব্যাচ তার হাসপাতালে জন্য বরাদ্দ করেন তখন তার জন্য পরীক্ষা করতে হয়। হাসপাতালে রোগীদের যে বিপুল চাপ তার জন্য সঠিক সময় পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসার আগেই সেই ওষুধ ব্যবহার করতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা হওয়ার পর যদি সেই ওষুধের গুণগত মানে কোন সমস্যা থাকে, বাধ্য হয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেই রিপোর্ট চেপে রাখতে হয়। আর তারপর চিকিৎসকদেরই শাস্তির মুখে পড়তে হয়। সরকার বা ড্রাগ কন্ট্রোল এই ব্যাপারে বরাবর উদাসীন।"
সংগঠনের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন কিভাবে জেনেরিক ওষুধের নামে ভেজাল ওষুধ, কম গুণগত মানের ওষুধ মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে কোটি কোটি টাকার জাল ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ড্রাগ কন্ট্রোলের কেন্দ্রীয় শাখা ও রাজ্য শাখা সেই বিষয়ে নিশ্চুপ। নিয়মিত যে তদারকি করা দরকার তা তারা করে না। কোভিড পরবর্তী সময়ে একের পর এক ওষুধের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে বেড়েছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে কর্পোরেট নীতি। বারংবার সরকারের কাছে দাবি করা হয়েছে যে ওষুধ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এই পণ্য থেকে জিএসটি মকুব করতে হবে। কিন্তু উল্টে দেখা যাচ্ছে ওষুধের ওপর ১২ থেকে ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি বসাচ্ছে সরকার।
WBMSRU
সুলভে সঠিক মানের ওষুধের দাবিতে ২০ মে’র ধর্মঘটে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা

×
Comments :0