Kolkata Hawker

হকার উচ্ছেদে অস্ত্র ‘হেরিটেজ’, কলকাতা কর্পোরেশনে প্রশ্নের মুখে তৃণমূল

কলকাতা

অরিজিৎ মণ্ডল
ঐতিহ্যশালী বা ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা কি হকার উচ্ছেদের নতুন কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে? শুক্রবার কলকাতা কর্পোরেশনের মাসিক অধিবেশনে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। হকারদের সমীক্ষা এবং টাউন ভেন্ডিং কমিশন ঘিরেও এদিন উঠল প্রশ্ন।
এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে যে ডালহৌসি চত্বরে ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। সেই জায়গায় একজন ব্যবসায়ী ফুটপাতে বাগান বানালেন সৌন্দর্যায়নের জন্য। গরিব হকার উচ্ছেদ করে এই সৌন্দর্যায়নে কি হকাররা পুনর্বাসন পাবেন? 
কলকাতায় বৈধ ও অবৈধ হকারের সংখ্যা কত? কলকাতা পৌরসভার কাছে কী সেই রকম কোনও তালিকা আছে? কলকাতা পৌরসভার মাসিক অধিবেশনে প্রশ্ন করেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। 
কলকাতা পৌরসভার মাসিক অধিবেশনে ছিল শুক্রবার। সেখানেই হকার সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন দুই কাউন্সিলর। সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার উত্তরে বলেন, "কলকাতায় বৈধ হকারের সংখ্যা ৫৪ হাজারের কিছু বেশি। তা বাদ দিয়ে যদি কোথাও অবৈধ হকার থাকে তাহলে কলকাতা পৌরসভার সার্কুলেশন ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" 
৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠকের প্রশ্ন করেন ৪ নম্বর নেতাজি সুভাষ রোডের একটি বাড়ি সংলগ্ন ফুটপাথ থেকে হকারদের তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের কি পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে? 
এই প্রশ্নের উত্তরে দেবাশিস কুমার বলেন, "কে বৈধ এবং কে অবৈধ হকার তার জন্য টাউন ভেন্ডিং কমিশন গঠন করা হয়েছে। কাউকে কোথা থেকে সরানো যেতে পারে, বৈধ এবং অবৈধ কিনা, তা ঠিক করে এই কমিশন। এই এলাকা কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ একটি এলাকা। কলকাতা কর্পোরেশন হেরিটেজ গ্রেড ওয়ান স্বীকৃত। তাই ওখান থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মে মাসে তাদের পাশেই নতুন করে একটি জায়গা দিয়ে ফের বসানো হয়েছে।" 
কিন্তু সন্তোষ পাঠক অভিযোগ করেন এখনো প্রায় অনেক জনকে বসতে দেওয়া হয়নি। তাহলে কি তাঁরা অবৈধ, নির্দিষ্ট করে জানাক কলকাতা পৌরসভা। তিনি বলেন, ‘‘যদি বৈধ হয তাহলে তাদের কি পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে? যেখানে হেরিটেজ রয়েছে সেখানে কেন একজন ব্যবসায়ী কলকাতা কর্পোরেশনের ফুটপাতে গাছ লাগাবেন?’’
তখন দেবাশিস কুমার বলেন এই বিষয়টি সঠিকভাবে তাঁর বিভাগের জানা নেই। বিষয়টিকে খতিয়ে দেখা হবে। তবে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে চিহ্নিত বাড়ির সামনে কোনরকম হকার বসানো যাবে না। ব্যবসায়ীর সৌন্দর্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের চলাচলের জন্য যথেষ্ট রাস্তা খালি রেখেই সৌন্দর্যায়ন করতে হবে।’’ 
সন্তোষ পাঠক বলেন, ‘‘দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এই এলাকায় হকারি করছেন এই ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে কেন ওই জায়গাকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হলো। নিয়মাবলী কি সঠিকভাবে দেখা হয়েছে? তাঁর অভিযোগ, টাকা পয়সার লেনদেন রয়েছে এই কায়দায় হকার উচ্ছেদে।’’ 
কলকাতা পৌরসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান ও পৌরসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা মধুছন্দা দেব বলেন, ‘‘হকারের সমীক্ষা যখন করা হয় তখন কেন স্থানীয় পৌর প্রতিনিধিকে জানানো হয় না। বিভিন্ন হকার ইউনিয়নের সঙ্গেও কথা বলা হয় না কেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘এই হকার সমস্যা বেড়েছে কারণ যুব সমাজের কাছে চাকরি নেই। আমরা বলছি কাউকে পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করা যাবে না।’’
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্ট্রিট হকার ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি দেবাশিস দে বলেন, ‘‘কলকাতায় প্রায় ২ লক্ষের কাছাকাছি হকার রয়েছে। আজ কলকাতা পৌরসভায় মেয়র পরিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার যে তথ্য দিয়েছেন তা ভুল। যে টাউন ভেনডিং কমিশন করা হয়েছে তা বৈধ নয়। আমাদের দাবি এই কমিশনে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।  যে টাউন ভেন্ডিং কমিশন তৈরি হয়েছে তা ২০১৪ সালের হকার আইন অনুযায়ী হয়নি।’’

Comments :0

Login to leave a comment