MA Baby on VS Achyutanandan

শ্রমজীবীর অসাধারণ নেতা, ভিএস স্মরণে বললেন বেবি

জাতীয়

শ্রমজীবীর মধ্যে থেকে উঠে এসেছিলেন। শ্রমজীবীর অসাধারণ নেতা হয়ে উঠেছিলেন। কম ভিএস মানে সংগ্রাম।
বৃহস্পতিবার পিডিজি ভবনে ভিএস অচ্যুতানন্দনের স্মরণসভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি।
কেরালার কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলা স্মৃতি তুলে ধরেন বেবি। তিনি বলেন, ভি কৃষ্ণ পিল্লাই কেরালার মুজফ্‌ফর আহমেদ। প্রথম কমিউনিস্ট পার্টির ইউনিট গড়ে ওঠে গোপনে কোচিতে। তখন ব্রিটিশ শাসন। কৃষ্ণ পিল্লাইয়ের অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল কর্মীদের সম্ভাবনা বোঝার। তিনি কর্মীদের চয়ন করতে পারতেন। তিনি প্রশিক্ষণ দিতেন। সেই সঙ্গে পার্টি গড়ে তোলার দায়িত্ব সেই কর্মীদের দিতে পারতেন। পার্টি গড়ে তোলার এই শিক্ষা আজকেও গুরুত্বপূর্ণ। 
বেবি বলেন, ভিএস’র কঠিন জীবন। কারখানার সেই কাজ ছেড়ে তাঁকে কৃষি আন্দোলন গড়ে তুলতে পাঠালেন কুট্টুনাডে। জমিদারি শাসন তখন। শস্য উৎপাদন ব্যাপক, কিন্তু সেই এলাকায়, খেত মজুরদের জীবন দাসদের থেকেও খারাপ তখন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে খুন করতে সামন্ত প্রভুরা। তারপর খেতে জ্বালিয়ে দিত দেহ। বলত জমিতে ভালো সার হবে! সেই দিনের কথা ভাবুন। এমন এলাকায় কৃষ্ণ পিল্লাই সংগঠন করতে পাঠালেন ভিএস-কে। তিনি বুঝেছিলেন যে ভিএস লড়াই গড়ে তুলতে পারবেন ওই কঠিন এলাকায়। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারবেন। 
বেবি বলেন, ভিএস বক্তৃতা করতেন যখন তাঁর শরীরও কথার সঙ্গে মিলে দিত। সারা শরীর দিয়ে সংগ্রামের আহ্বান জানাতে পারতেন। আমার মনে আছে ১৯৬৯ উদ্বৃত্ত জমি কৃষকদের দেওয়ার জন্য লড়াইয়ের সভা। সে সভায় হরেকৃষ্ণ কোঙার ছিলেন, ইএমএস ছিলেন, ছিলেন পি সুন্দরাইয়া। সেই সভার সংগঠক ছিলেন ভিএস। 
বেবি বলেন, ভিএস সেই খেতমজুরদের শিখিয়েছিলেন যে তাঁরা লড়াই করতে পারেন। তাঁদের সাহস জুগিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন সমতার ধারণা। আর দিয়েছিলেন লাল পতাকা। আর সেই এলাকার খেতমজুর পরিবারের জনতা লাল পতাকা নিয়ে হিংস্র জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম গড়ে তোলেন। 


কেরালায় শ্রমজীবীর লড়াই গড়ে তুলতে ভিএস’র মতো কর্মীদের বিরাট ভূমিকা ছিল। সেই নেতৃত্ব গড়ে তুলেছিলন কমরেড কৃষ্ণ পিল্লাই। পার্টি গড়ার এই শিক্ষা নিতে হবে।   
বেবি বলেন, তখন পরাধীন ভারত। একদিকে স্বাধীনতার জন্য আরেকদিকে জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে চলছে লড়াই। কমরেড ভিএস’র দক্ষতার আরেকটি দিক হলো তিনি নির্বাচনী লড়াইয়েও অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৭ সালে ইএমএস সরকার। পরের বছর ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন। ইডুক্কিতে সেই নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল ভিএস-র। গোপনে বিদেশি চক্রান্ত হয়েছিল ওই সরকার ফেলার জন্য। ভিএস সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে ব্যবহার করেন সেই উপনির্বাচনে। সঙ্গীত পরিচালক ইলাইয়া রাজা প্রচার করেছিলেন সেই নির্বাচনে। এমজি রামচন্দ্রন, পরে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী, অভিনেতা, আমাদের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছিলেন। তিনি আলেপ্পি জেলা সম্পাদক ছিলেন। গড়ে তুলেছিলেন নাট্যদল। বাংলা সব সময়েই তা জানে। 
বেবি বলেন, ভিএস সর্বদা বিচ্যুতির বিরুদ্ধে, বাম বা ডান, দুরকম বিচ্যুতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পূর্ব ইউরোপে বিপর্যয়ের পর পার্টি বহু অংশে সংশয় দেখা গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে সিপিআই(এম) মাদ্রাজ পার্টি কংগ্রেসে বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা করেছিল, মতাদর্শ প্রয়োগের ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল। ভিএস বলতেন, শ্রমজীবীর ধাপে ধাপে হলেও শ্রমিক শ্রেণির লড়াই সামনের দিকেই এগোয়। বাধা, বিপত্তি আসে। কিন্তু তা সাময়িক। শ্রমিক শ্রেণিকেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে হবে, এই বোঝাপড়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, প্রয়োগ করতেন। 
বেবি বলেন, কমরেড ভিএস যখন মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তখন রাজ্যের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভারসাম্য রাখতেন। নতুন ধরনের উদ্ভাবনী প্রস্তাবের পাশে দাঁড়াতেন। আবার বলতেন যতটা পারবেন ততটাই বলবেন। বাড়িয়ে বলবেন না জনতাকে। এই শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। ফ্রি সফ্‌টওয়ার আন্দোলনের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। মাইক্রোসফ্‌টের লোভনীয় প্রস্তাব খারিজ করে শিক্ষাক্ষেত্রে ফি সফ্‌টওয়ার ব্যবস্থা প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। একইভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ আন্দোলনের প্রশ্নে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের অসাধারণ নেতা।

Comments :0

Login to leave a comment