গল্প / মুক্তধারা
নিবিড়- তিমির
দেবাশিস ভট্টাচার্য
২৫ শে বৈশাখ, ১১ মে ২০২৫, বর্ষ ৩
‘‘ধর্মের চেয়ে অপ্রতিরোধ্য আর কিছু নেই’’ - শুরু করেছিলাম এই বাক্যটা দিয়ে। শেষ করলাম, ‘মানুষকে ক্ষুধার্ত আর বোকা বানিয়ে রাখলে শাসক যে কোনো উদ্দেশ্য পূরণ করে নিতে পারে সহজে।’
রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ লেখার অর্ডার পেয়েছি। সরকারি উদ্যোগে পত্রিকা প্রকাশ। ফোন করে লেখা চেয়েছেন সদ্য গঠিত পত্রিকা কমিটির সভাপতি মহোদয়।
হেসে বলেছিলাম, ‘এই ভাবনায় আমার ভাবনার সঙ্গে মিলবে না কিন্তু আপনাদের মতামত।’ তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘লিখুন আপনি।’
দু’হাজারের কাছাকাছি শব্দের লেখাটি লিখে পাঠিয়ে দিলাম নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে। সন্ধ্যেবেলা ওরা জানালো , ‘একটু ছোট করে দিন লেখাটা। কালকের মধ্যে পাঠিয়ে দেবেন।’ মহা ফ্যাসাদে পড়লাম আমি। এ থেকে কোন বাক্যটা বাদ দেব! তবু চেষ্টা চরিত্র করে শ -তিনেকের মতো শব্দ বাদ দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। আবার ফরমান, ‘এই পাঁচশো - সাড়ে পাঁচশো র মধ্যে- - - -’
আমি আর ছোট করিনি লেখা।
পত্রিকা প্রকাশের শেষ মুহূর্তে ফোন এলো সভাপতি মহাশয়ের। বেশ হুমকির স্বরে বললেন, ‘লেখাটা ছোটো করে পাঠালেন না? এখানে লেখা ছাপানোর জন্য কত নামী লেখক লাইনে অপেক্ষা করছেন জানেন? তাদের সবাইকে তো জায়গা দিতে হবে আমায়! আমি চেয়েছিলাম দলমত নির্বিশেষে ১৬৫ তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী সংখ্যা প্রকাশ করতে। এখনো সংকীর্ণতা গেলো না আপনাদের! আর কতদিন কূপমণ্ডূক হয়ে থাকবেন! এই বিশেষ সংখ্যা ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ - তে আপনার লেখা থাকুক আন্তরিক চেয়েছিলাম আমি।’
রামকিঙ্করের আঁকা সেই বৃদ্ধ ভাস্কর্যটা কাঁপছে আমার দৃষ্টিতে। এক অন্ধকারের পাকদন্ডী বেয়ে একদল মানুষ হেঁটে যাচ্ছে আলো হাতে। সেই বিন্দু বিন্দু আলোর সিন্ধু কতবার কল্পনায় দেখি আমি। আজ তাকে নিয়ে কৃত্রিমভাবে পুজো করার কত আয়োজন!
আমি জানতাম, যে সব কথা লেখা আছে প্রবন্ধটিতে ছাপতে গেলে দম লাগবে ওদের। বললাম, ‘কিছু মনে করবেন না। রবীন্দ্রনাথকে অনেক ছোট করে ফেলতে চাইছেন আপনারা। রবীন্দ্রনাথকে আর ছোট করে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ক্ষমা করবেন আমাকে।’
Comments :0