ছাত্র শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের বিক্ষোভ ছিল বিকাশ ভবনে চাকরিহারা শিক্ষকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে। ঠিক সামনে রাস্তা আটকে দফায় দফায় প্ররোচনা দিয়ে চলল বিজেপি।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সামনে সমবেত বামপন্থী শিক্ষক-ছাত্র-যুবকর্মীদের লক্ষ্য করে সমানে চলল গালিগালাজ। চলতে থাকল স্লোগান, ‘দেশ কো গদ্দারোঁ কো, গোলি মারো শালো কো’। সমানে বলা হলো ‘দেশদ্রোহী’, ‘পাকিস্তানের দালাল’। বস্তুত বিভাজনের খোঁজে নেমে দিশেহারা বিজেপি-আরএসএস’র হতাশা ফুটে বেরল শুক্রবার।
এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এবিটিএ, এবিপিটিএ’র পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মীর একযোগেই শিক্ষক নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদিন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন।
শুক্রবারই কলেজ স্ট্রিট থেকে ‘অপারেশন সিন্দুর’-র জন্য নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিক্ষোভ সভার নির্ধারিত সময়ের আগেই মিছিল চলে যাওয়ার কথা ছিল।
তা হয়নি, কারণ মিছিলের বিভিন্ন অংশ সমবেত বামপন্থী প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করেই প্ররোচনা ছড়াতে ব্যস্ত ছিল।
ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে সারা দেশ একজোট। আর বিজেপি-আরএসএস চেয়েছে বিভাজন ছড়াতে। পহেলগামে নিহতদের পরিবারও বিদ্বেষপ্রচারের বিরোধিতা করছেন। কাশ্মীরের টাট্টু চালকদের সহায়তায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। আর এ রাজ্যে আমরা একজোটে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদ করছি। বিজেপি হতাশ। দুর্নীতিতে যুক্ত তৃণমূল নেতাই এখন বিজেপি’র বিধায়ক হয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। সে কারণে তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তা আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠছে বিজেপি।’’
বিজেপি এবং কেন্দ্রের তাদের সরকার এখনও বুঝিয়ে উঠতে পারেনি কেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হস্তক্ষেপ করলেন দু’দেশের সম্পর্কে। কেন পহেলগামের বৈসরণে জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে ছিল না একজনও নিরাপত্তারক্ষী। অথচ ৩৭০ ধারা জারি এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে নিরাপত্তার দায়িত্ব হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত গাফলতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছেন। বিরোধীরা সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানালেও বিজেপি চুপ। তার ওপর পাকিস্তানের তোলা অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে সেনার সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। দেশের সংবিধানের প্রতিফলন রেখে দায়িত্ব পালন করে সেনা। সব মিলিয়েই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এখন নতুন নতুন ‘টার্গেট’ খুঁজতে হচ্ছে।
কলেজ স্ট্রিটে এমনকি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের লক্ষ্য করে জুতো দেখাতেও বাধেনি বিজেপি কর্মীদের।
এবিটিএ’র কলকাতা জেলা সভাপতি বিপ্লব তিলক বলেছেন, ‘‘দেশপ্রমের পাঠ শেখাচ্ছে আরএসএস! স্বাধীনতার লড়াইয়ে যাদের কোনও ভূমিকা নেই। আর সেই সংগ্রামের ঐতিহ্য বয়ে চলেছে বামপন্থীরা। যত চেষ্টাই হোক,
বিভাজনকে রুখে একজোটেই সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ব আমরা।’’
সভায় এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী বলেছেন, ‘‘এই সরকার রাজ্যে পঠন পাঠন তুলে দিয়েছে। আমরা চাই যোগ্য শিক্ষকরা স্কুলে ফেরত যান। যোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি চাইছেন শিক্ষকরা। চাইছেন ওএমআর শিট। দিতে পারছে না সরকার। আর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী গায়েব। তাঁকে এসে দিতে হবে ওএমআর শিট।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নেই। স্কুলে শিক্ষকের অভাব। স্কুলে শিক্ষা ভেঙে পড়ছে। তৃণমূল সরকার গরমের ছুটির দিন বাড়িয়ে সমস্যা আড়াল করছে। আমরা ছাত্র, প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সবাই শামিল শিক্ষা বাঁচানোর লড়াইয়ে। এই লড়াই চলবে।’’
শনিবার বিকেলে কলেজ স্ট্রিট থেকে শিয়ালদহ মিছিল এবিপিটিএ’র।
Comments :0