সিপিআই (এম)’র পার্টিসদস্য এক আইসিডিএস কর্মীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার চাপড়া থানা এলাকায় তাঁর টিনের চাল দেওয়া একচিলতে বাড়িতে বিবস্ত্র রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে একজোড়া হাতের বালা, বেশ কয়েকটি ফাঁকা মদের বোতল, একটা টর্চ লাইট, ছেঁড়া গেঞ্জি। তিনি সিপিআই(এম) দৈয়েরবাজার এলাকার পার্টির শাখা সদস্যা, বয়স ৫৫ বছর। এই অত্যাচার, ধর্ষণ ও খুনের নৃশংস ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্যের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সিপিআই(এম) নদীয়া জেলা সম্পাদক মেঘলাল শেখ সহ সিআইটিইউ নেতৃত্ব এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে এই দরিদ্র পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার সকালে গ্রামবাসীদের সহযোগিতার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানোর পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। এরপর দেহটি পাঠানো হয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার জন্য। তাঁর স্বামী পেশায় স্থানীয় পেট্রোল পাম্পের কর্মী। নিহত মহিলা কখনও শ্বশুরবাড়িতে, কখনও বাপের বাড়িতে থাকতেন, সবই ছিল চাপড়া থানা এলাকার মধ্যেই। নিঃসন্তান হওয়ায় এই পরিবার একটি পুত্রসন্তানকে দত্তক নেন। বছর আটের সেই পালিত সন্তান বেশিরভাগ সময়েই তার মায়ের সঙ্গেই থাকতো। তবে এদিন সে ছিল তার বাবার কাছে।
এলাকার আইসিডিএস সেন্টারটি রোজ সকালে খোলা এবং বন্ধের দায়িত্ব পালন করতেন ওই আইসিডিএস কর্মী। কিন্তু এদিন সকালে সেন্টার বন্ধ দেখে, অন্যান্য আইসিডিএস কর্মীরা তাঁর বাড়িতে যান। তাঁরাই প্রথম লক্ষ্য করেন, টিনের চাল দেওয়া, ইটের দেওয়ালের বাড়ির দরজা ভাঙা। ঘরে ঢুকতেই আাঁতকে ওঠেন সকলে। তাঁরা দেখেন বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত হয়ে নিথর অবস্থায় চৌকির ওপরে পড়ে রয়েছেন তিনি। তাঁদের চেঁচামেচিতে গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন। এরপর সবটা জানানো হয় চাপড়া থানায়। খবর পেয়ে চাপড়া থানার আইসি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশ ঘটনাস্থল এলাকা থেকে একজোড়া হাতের বালা, বেশ কয়েকটি ফাঁকা মদের বোতল, একটা টর্চ লাইট, ছেঁড়া গেঞ্জি উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনায় বাক্রুদ্ধ ও হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই মহিলা ছিলেন খুবই ভদ্র স্বভাবের এবং অত্যন্ত মিশুকে। তাঁর ব্যবহারও ছিল আমায়িক। দলমত নির্বিশেষে, হাসি মুখের এই আইসিডিএস কর্মী ও পার্টিসদস্যা ছিলেন সকলের অত্যন্ত প্রিয়। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। মূল রাস্তা থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে ছিল তাঁর এই বাসস্থান। তাঁর ঘরের অদূরেই বসবাস করেন তাঁর ভাইপোরা। উল্লেখ্য, মৃতার ৩ দাদা ও ভাই আগেই প্রয়াত হয়েছেন। বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড়ও রয়েছে। সেখানকার পরিবেশেও নির্জন ও নিরিবিলি। কয়েক বছর আগে তাঁর দাদা-ভাইয়ের মৃত্যুর পর বাপের বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাই ছিলেন তাঁর আপনজন।
প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি দেখে অঞ্চলবাসীর অনুমান, প্রবল বৃষ্টির দুর্যোগময় পরিবেশে দুষ্কৃতীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। এরপর তাঁর ওপরে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে, পরে নৃশংসভাবে খুন করে তারা। লাগাতার বর্ষণের কারণে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি বা আর্তনাদ করে থাকলেও সে শব্দ কানে আসেনি পার্শ্ববর্তী পরিজন সহ গ্রামবাসীদের কারোর কানেই। খবর পেয়েই স্থানীয় পার্টি নেতৃবৃন্দ, কর্মী, সমর্থক, দরদি সহ গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন তাঁর বাড়িতে। শান্তিপূর্ণ এই এলাকায় অজাতশত্রু এই মহিলার এহেন ধর্ষণ খুনের নৃশংস ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্যের সঙ্গে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাজুড়ে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়। দিনের পর দিন মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে উঠেছে জোরদার প্রশ্ন।
সিআইটিইউ নদীয়া জেলা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক এসএম সাদি এই মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন তিনি। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ তাঁর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পার্টির দৈয়েরবাজার এরিয়া কমিটির অফিসে নিয়ে আসা হলে সেখানে পার্টির পক্ষ থেকে রক্ত পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেতাকর্মীরা। মরদেহে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান এরিয়া সম্পাদক মোহন মণ্ডল, শাখা সম্পাদক শান্তিরঞ্জন বিশ্বাস সহ গোকুল বিশ্বাস, আইসিডিএস কর্মী সমিতির নেত্রী মীনা বিশ্বাস, বিপ্লব বিশ্বাস, বিদ্যুৎ বিশ্বাস, পরিতোষ ঘোষ সহ গণআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এদিনই নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে চাপড়া থানার পুলিশ। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
Chapra rape and murder
চাপড়ায় পার্টিসদস্যকে ধর্ষণ, খুন

×
Comments :0