MAMATA 'INDIA'

রহয়ময়ীর ছলাকলা

সম্পাদকীয় বিভাগ

আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোটের তিনি অন্যতম কারিগর। বিরোধী জোট গড়ে মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তিনি নাকি বদ্ধপরিকর। এমন সুললিত ভাষণ তাঁর মুখে এবং তাঁর দলের নেতাদের মুখে হামেশাই শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে তাঁর, তাঁর দল ও তাঁর সরকারের আচরণ থেকে বোঝার উপায় নেই তিনি ঠিক কাদের পক্ষে এবং কাদের হারাতে চান। জোট গড়ার পর সেটা খানিক পাকাপোক্ত হতে না হতেই তিনি কার্যত সতর্কতা জারি করে জানিয়ে দিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে আসন বণ্টন সেরে ফেলতে হবে। পাশাপাশি বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হলো কংগ্রেসকে দু’টির বেশি আসন ছাড়া হবে না। যদি আর একটি বাড়াতে হয় তাহলে আসামে ও মেঘালয়ে তৃণমূলকে বেশ কিছু আসন ছাড়তে হবে। এমনকি গোয়াতেও আসন দিতে হবে। অর্থাৎ তৃণমূলের শর্তে কংগ্রেসকে তৃণমূলের হাত ধরতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এমন শর্তে আসন ভাগের আলোচনা মসৃণ হতে পারে না। আলোচনা ভেস্তে না গেলেও থমকে গেছে। কংগ্রেসের তরফে আলোচনার রাস্তা‍‌ রেখে উভয় তরফে নমনীয় হবার কথা বলা হয়েছে যাতে ভারসাম্য রক্ষা করে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। কিন্তু তৃণমূল সেই ডাকে সাড়া দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গে তারা একলা চলা অর্থাৎ ৪২ আসনেই একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছে।
ইন্ডিয়া জোট কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো সিপিআই(এম)-ও আছে। কিন্তু সিপিআই(এম) গোড়া থেকেই জানিয়ে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার কোনও অবকাশ নেই। এরাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস সহ সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে একসঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোটে ভীষণভাবে আগ্রহী। তাতে বামপন্থীদের বলা কিছু নেই।
পরিস্থিতি এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, বলা ভালো সচেতনভাবে যেখানে এনে দাঁড় করানো হয়েছে তাতে এরাজ্যে বাকিরা জোট বেঁধে লড়াই করলেও তৃণমূল জোটের বাইরে থেকে জোটের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। জোটের মধ্যে উপজোট গড়ে বিজেপি’র সুবিধা করে দেবার যারা কারিগর তাদের একজন ইতিমধ্যেই জোট ছেড়ে বিজেপি’র হাত ধরেছে। এরাজ্যে সরাসরি না হলেও পরোক্ষে বিজেপি’র সুবিধা করে দেবার ব্যবস্থা হচ্ছে।
এরাজ্যে তৃণমূলের মূল লড়াই কার বিরুদ্ধে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা গভীর আকার নিয়েছে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর। আরএসএস-বিজেপি’র রাহুলের যাত্রা হলেও তৃণমূল এবং তাদের সরকার সহযোগিতার বদলে যাত্রা বানচাল করতেই যেন আদাজল খেয়ে লেগেছে। অথচ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অনেক আগেই রাহুলের নিরাপত্তা এবং ন্যায় যাত্রায় সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়েছে। এমনকি তৃণমূলকে অংশ নেবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সেটা না করে যাত্রা উপলক্ষে পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি খুলেছে, ছিঁড়েছে। দলীয় ঝান্ডা নিয়ে মিছিল করে যাত্রা আটকাবার চেষ্টা করেছে। পুলিশ কংগ্রেসের মিছিল আটকেছে। শিলিগুড়িতে সভা করার জন্য মঞ্চ বানাতে দেয়নি। মালদহে দুপুরে খাবার জন্য রাহুলকে সরকারি গেস্ট হাউস দেয়নি। বহরমপুরে রাত কাটানোর জন্য রাহুলকে স্টেডিয়ামে থাকার অনুমতি দেয়নি। ডিওয়াইএফআই ইনসাফ যাত্রার সময়ও পদে পদে এমন বাধা দিয়েছিল তৃণমূল ও সরকার। অথচ ভাইপোর প্রমোদ যাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে পুলিশ ও প্রশাসন। রাহুলের যাত্রা বন্ধ করতে আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা যা যা করেছেন এরাজ্যের তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীও সেটাই করছেন। অথচ রাহুল তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। 
এত কিছু করেও যখন রাহুলের যাত্রা জনসমাগম আটকানো যাচ্ছে না তখন ভীত নেত্রী রাহুলের যাত্রার পিছু পিছু নিজেও হাঁটার কথা জানিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে না তিনি বিজেপি’র বিরুদ্ধে না কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment