PROBANDHAY — PALLAV MUKHOPADHYA — MAY DAY — MUKTADHARA —1 MAY 2025, 2nd YEAR

প্রবন্ধ — পল্লব মুখোপাধ্যায় — ইতিহাসের আলোকে মে দিবস — মুক্তধারা — ১ মে ২০২৫, বর্ষ ২

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHAY  PALLAV MUKHOPADHYA  MAY DAY  MUKTADHARA 1 MAY 2025 2nd YEAR

প্রবন্ধমুক্তধারা, বর্ষ ২

ইতিহাসের আলোকে মে দিবস
পল্লব মুখোপাধ্যায়

১ মে বা পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সচরাচর মে দিবস নামে অভিহিত। প্রতি বছর পয়লা
মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয় এই শ্রমিক সংহতির দিনটি । এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক
আন্দোলনের উদ্‌যাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে
সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের
প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে এই
দিনটি পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত করেছিলেন
। তাঁদের ঘিরে থাকা পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ
নিহত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের
প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী
আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে
আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে
আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি
প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল
সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই
সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে 'বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার'
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে
পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক,
কমিউনিস্টরা তাঁদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসেবে বেছে নেন। কোনও কোনও
স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে মশালও জ্বালানো হয়ে থাকে। সাবেক
সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, ভিয়েতনাম, ল্যাটিন আমেরিকার নানা দেশ, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে
দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। অনেক দেশে এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয়
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে। স্বীকৃতি পায় মে দিবস।

কাজ যেমন জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময় পাওয়া। সেই ১৮৮৬ সালে, মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর বাকি ৮ ঘণ্টা নিজের ইচ্ছে মতো অবসর
যাপনের দাবিতে পথে নেমেছিলেন । পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল শ্রমিকদের। কয়েকজন শ্রমিক নিহত
হন বটে কিন্তু তাঁদের দাবি তো মরেনি৷
সেই শহীদদের স্মরণে গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় মে দিবস। মে মাসের প্রথম তারিখটা তাই সেই
মানুষগুলিকে স্মরণ করার দিন, যাঁরা বিশ্বকর্মা, যাঁরা এই সভ্যতার স্রষ্টা। রবীন্দ্রনাথ যাঁদের
বলেছিলেন 'সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলাে পায়, তাদের

গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।' সেই শ্রমিকদের দিন পয়লা মে। এই দিনটিতে প্রকৃতই 'গান গায় হাতুড়ি ও
কাস্তে'| বিশ্বায়ন, উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণের এই সময়ে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নতুন নতুন
আক্রমণ নেমে আসছে | এই দিন তাই অধিকার বুঝে নেওয়া ও সচেতন হওয়ার দিনও |
 

Comments :0

Login to leave a comment