প্রতিরক্ষার তিন বাহিনীর প্রখধান, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে নিয়ে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার এক সপ্তাহ পরে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আলাদা করে এনএসজি, বিএসএফ, সিআরপিএফ এবং সীমা সুরক্ষা বলে শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। পরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবৎকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হাজির হন অমিত শাহ। এমন তৎপরতার পর জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নাকি সেনা পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদীদের মদতদাতাদের অভাবনীয় শাস্তি দেবার। কবে, কখন, কীভাবে এই অভাবনীয় সাজা দেওয়া হবে স্পষ্ট নয়। সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসাবে যেহেতু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে তাই ধরে নেওয়া যায় অভাবনীয় সাজা পাবে পাকিস্তান। অতীতে উরিতে ভারতীয় সেনা শিবিরে হামলার পর পাক সীমান্তে ঢুকে ভারতীয় সেনারা যেমন সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করেছিল এবং পুলওয়ামার ঘটনার পর যেমন পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান বোমা ফেলেছিল ধরে নেওয়া যায় এবারও তেমন কিছু একটা হবে। অবশ্য পাকিস্তান থেকে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে ভারত যদি সামরিক হামলা চালায় তবে তাকে যুদ্ধ শুরু বলে বিবেচনা করে পালটা জবাব দেওয়া হবে। এমনকি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারেও দ্বিধা না করার ইঙ্গিত আকারে ইঙ্গিতে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অভাবনীয় শাস্তি দেবার আগে ভারতকে অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে।
এই অভাবনীয় সাজাটা বড্ড গোলমেলে। এর আগে মোদী জমানায় দু’বার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে কমান্ডো অভিযান ও বিমান হানার সময়ও বলা হয়েছিল মোদী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। মোদীভক্তরা স্তুতি গাইতে গিয়ে তেমন কথাও বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদ না ধ্বংস হয়ে গেছে। কেমন কোমর ভেঙেছে বা ধ্বংস হয়েছে সেটা গোটা দেশ তথা দুনিয়া দেখছে। মোদীরা এক একটি কঠোর পদক্ষেপ নেন আর তার কিছুদিন পর সন্ত্রাসবাদীরা আরও বড় আকারের হামলা চালিয়ে মোদী-শাহদের ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। যেমন বুঝিয়ে দিয়েছে পহেলগামে ২৬জনকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পর গত এক সপ্তাহ ধরে মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস, বিজেপি বাহিনী লাগাতার হুমকি দিচ্ছে আর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজন সৃষ্টি করছে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে তারা তেমন কিছু বলছে না। তাদের প্রধান টার্গেট কাশ্মীরের মানুষ এবং সামগ্রিকভাবে দেশের মুসলিমরা। দেশজুড়ে মুসলিম বিরোধী এক প্রবল হিস্টিরিয়া গড়ে তুলতে চাইছে। একইভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী ঝড় তোলার চেষ্টা হচ্ছে। মাঝখান থেকে আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে সীমাহীন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার কথা। সন্ত্রাসবাদীরা তো সন্ত্রাসবাদীই। সন্ত্রাস-খুন-ধ্বংসই তাদের কাজ। তারা তাদের কাজ সফলভাবে করে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের কাজ সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি ও পরিকল্পনার উপর নজর রাখা এবং নিশ্চিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যাদের কাজ মোদী জমানায় তারা চূড়ান্ত ব্যর্থ। হামলার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গির ছবি বানিয়ে দিতে পারে, তারা কোথা থেকে কোন পথে কীভাবে হামলা করতে যায় এবং পালিয়ে যায় সব কিছু পরে বলতে পারে কিন্তু আগে কোনও তথ্যই জোগাড় করতে পারে না।
তাই প্রশ্ন ওঠে পাকিস্তানে উরি বালাকোটের মতো হামলা করে লাভ আছে কি? তাতে গায়ের ঝাল কিছু মিটতে পারে সন্ত্রাসবাদীদের ঠেকানো যাবে কি? জলচুক্তি, সিমলা চুক্তি বাতিল, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ, দু’দেশের নাগরিকদের স্বদেশে পাঠানো ঘোষণায় হাওয়া গরম হয় বটে তাতে সন্ত্রাসবাদের গায়ে আঁচড় লাগে কি? মোদীরা কবে বুঝবেন পেশি বা বুকের ছাতি দেখিয়ে বা সামরিক স্টিমরোলার চালিয়ে জঙ্গি দমন করা যায় না। কাশ্মীরের মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করে তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সন্ত্রাসবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াতে হবে এবং পাক ভারত সম্পর্ককে ঘোর শত্রুতার জায়গা থেকে নামাতে হবে। যুদ্ধ কোনোদিন কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না।
Towards a stern reply
কঠোর শাস্তির সন্ধানে

×
Comments :0