‘‘আমি ১২ বছর অত্যন্ত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু কী হবে আমার ভবিষ্যৎ? আমার ভাই ক্লাস ৭ পড়ে। ওর ভবিষ্যৎ কী হবে?
আপনারা তো প্রতিবেদন করছেন কিন্তু কাল যদি আমাদের কিছু হয় তার দায়িত্ব কে নেবে? কী করব আমরা?’’
গুরগাঁও বা গুরুগ্রামে দ্বাদশ পাশ ছাত্রী সাইনু পরভিন বড় প্রশ্ন তুলেছে। প্রবীণ সাংবাদিক অজিত আনজুমের ইউটিউব চ্যানেলে এভাবেই বলেছে সে।
গুরুগ্রামের এই এলাকায় দলে দলে বাংলাভাষীরা ফিরে আসছেন বাংলায়। হরিয়ানার পুলিশ রাতে আসছে সাদা পোশাকে, নম্বরপ্লেট ছাড়া গাড়িতে। তুলে নিয়ে যাচ্ছে অজানা জায়গায়। চলছে অত্যাচার।
তারই বিবরণ সেদিন দিচ্ছিলেন বাসিন্দারা। ক্যামেরা পৌঁছেছিল কলেজে ভর্তির ওই ছাত্রীর কাছেও। সিবিএসই-র একাদশে পাঠরতা ছাত্রী বলেছে কিভাবে চলবে পড়াশোনা যদি সবসময় ভয় থাকে কখন মা বা বাবাকে তুলে নিয়ে যাবে। কেন যাবে? সব নথি থাকা সত্ত্বেও কেনই বা বলা হবে বাংলাদেশি?
বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের দেশ জুড়ে আক্রমণ চলছে। বাংলাদেশি বলে তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনও নোটিশ ছাড়াই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিজেপি সরকার পরিচালিত রাজ্যগুলিতে।
চাত্রী বলেছে, ‘‘আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছি। বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে সবাই। আমাদের কাছে প্রমাণিত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের মনে একটাই প্রশ্ন যে কেউ আমাদের তুলে নিয়ে যাবে না তো?’’
বাবার জামাকাপড়ের দোকান, মা গৃহ সহায়িকার কাজ করে। তাঁদের রোজ কাজে বেরোতে হয়। তাঁদের সুরক্ষা কে দেবে, প্রশ্ন ছাত্রীর। সে বলেছে, ‘‘কয়েকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে? কী করছে? তারা কতটা অত্যাচারিত হচ্ছে সেসব বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। সরকার আসুক আমাদের সব প্রমাণিত নথিপত্র খতিয়ে দেখুক।’’
ছাত্রী ভিডিও প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমকে সরাসরি বলেছে, ‘‘সাংবাদিকদের তো গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। আপনারাও আসুন, সব খতিয়ে দেখুন আমরা বাংলাদেশী নই। আমরা ভারতীয়, আমাদের সব বৈধ নথিপত্র আছে। আমরা ২০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। আমরা এই শহরের উন্নতির জন্য আমরাও অবদান রাখছি। কিন্তু তার বদলে আমরা কিছু পাইনি, ঠিক যেমনভাবে এসেছিলাম তেমনভাবেই খালি হাতে ফিরতে হবে।’’
সে বলেছে, ‘‘অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম আমরা। কিন্তু সেই আশাগুলোর আর কোনও মানে রইল না।’’
গুরগাঁওয়ের বাঙালি মার্কেট এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমজীবীরা ফিরছেন পশ্চিমবঙ্গে। পড়ে রইল রোজগারের আশা। পড়ে রইল সন্তানদের ভবিষ্যৎ।
Comments :0