—‘শ্রেণি সংগ্রাম’ শব্দ যুগল বিপজ্জনক। 
কী ব্যবহার করা যেতে পারে? ‘সেফার’, অর্থাৎ তুলনামূলক নিরাপদ হলো—‘ওয়ার্কার মবিলাইজেশন’। অর্থাৎ শ্রমিকদের জমায়েত।
‘পুঁজিবাদকে ধ্বংস করুন’—  নাহ্। বলা, লেখা ঠিক হবে না। ব্যবহার করলে গ্রহণ করা হবে না। তার বদলে কী লেখা যায়? তারও পরামর্শ আছে। ব্যবহার করতে পারেন ‘পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা’। 
প্রতিবাদে ‘পথে নামুন’ লেখা যাবে? না, লেখা যাবে না। সলিল চৌধুরি বেঁচে থাকলে তাঁর কালোত্তীর্ণ লড়াইয়ের হাতিয়ার গানটি নিয়ে সমস্যায় পড়তেন। ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতো ‘জেগে ওঠা’র  ডাকও।
বিষয়টি অভিনন্দনের বদলে ‘শুভনন্দন’ লেখার মতো হাস্যকর হলে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু সোশাল মিডিয়া জড়িয়ে ধরেছে সমাজকে আষ্টেপৃষ্টে। সেই সোশাল মিডিয়ার পক্ষ থেকে চ্যাট জিপিটি এমন পরামর্শ দিচ্ছে। পরামর্শ নামলে? অবাধ্য হওয়ার সুযোগ নেই। সোশাল মিডিয়া ওই শব্দগুলির জন্য ভিডিও, লেখা বাদ দিতে পারে। 
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমজীবীদের দুঃসহ জীবনের বর্ণনা তুলে ধরা একটি ভিডিও ফেসবুকে এবং ইউটিউবে প্রচার করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে আয়োজকদের। সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ওয়েবসাইট টিম ভিডিওটি বানিয়েছে। নাম—‘ওরা কাজ করে।’ কেন উপার্জনের জন্য মরিয়া পশ্চিমবঙ্গবাসীরা ভিনরাজ্যে কেন যান, কেন পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের কাজ নেই, এই অবস্থার জন্য কেন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক নীতি দায়ী, সেই সব প্রশ্নই তুলে ধরার জন্য এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ২মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি। সেটি পার্টির পক্ষ থেকে ফেসবুকে দেওয়ার চেষ্টা হয়। চেষ্টাতেই থেমে থাকতে হয়, কারণ—  সোশাল মিডিয়া জানিয়ে দেয় তাদের আপত্তি। আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতেই শব্দ, শব্দবন্ধ নিয়ে তাদের নানা পরামর্শ। 
স্বভাবতই এই কায়দা ফ্যাসিবাদের দিকে ধেয়ে চলা রাষ্ট্র এবং তার সঙ্গে লগ্নিপুঁজির সম্পর্ককেই স্পষ্ট করে। শ্রমজীবীদের সঙ্কট এবং তাঁদের রুখে দাঁড়ানোর যে প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত সহ বিশ্বে দেখা যাচ্ছে, তার প্রচার আটকানোর জন্যই এই কৌশল। বিজেপি’র অর্থনীতি আর তৃণমূলের অর্থনীতির বিশেষ প্রভেদ নেই। আবার সাম্প্রদায়িকতাকে দুটি দলই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। অন্যদিকে বামপন্থার প্রতি মানুষের সমর্থন, আগ্রহ বাড়ছে। তা ভিন দেশেও সত্যি। পশ্চিমবঙ্গেও। শ্রমজীবীদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতাই তাঁদের লড়াইয়ের ময়দানে টেনে আনছে। তাঁরা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন দেশে। তাঁরা ভারতে মোদী সরকারের শ্রম কোড সহ অন্যান্য শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুরদের স্বার্থ বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট করছেন। পশ্চিমবঙ্গে কাজের দাবিতে, মজুরির দাবিতে লড়ছেন মমতা ব্যানার্জির সরকারের বিরুদ্ধে।  
সেই লড়াইকে দুর্বল করতে, তার প্রচারকে লঘু করতে সোশাল মিডিয়াকেও ব্যবহার করছে শাসকরা। ‘ওরা কাজ করে’র অভিজ্ঞতা তার একটি দৃষ্টান্ত।
নিখরচায় আরও কী কী পরামর্শ দিচ্ছে চ্যাট জিপিটি?  
‘আমেরিকার কর্তৃত্ববাদ ধ্বংস হোক’ ব্যবহার করা যাবে না। ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন’ প্রয়োগ করা যাবে কিনা, নির্ভর করছে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। আর কিছু শব্দ আছে, যা থাকবে না কিছুতেই। যেমন ‘বিপ্লব।’ কিংবা ‘সরকার নিপাত যাক’, ‘আমূল পরিবর্তন’, ‘গেরিলা মুভমেন্ট’। এই তালিকায় আরও শব্দবন্ধ আছে।
 
Class Struggle Social Media
'ওরা কাজ করে’ দেখাতে চায় না ফেসবুক, ইউটিউব ‘শ্রেণি সংগ্রাম’, ‘বিপ্লব’ এসব এখন ‘বিপজ্জনক’ শব্দ
 
                                    
                                
                                    ×
                                    ![]() 
                                
                                                         
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0