Editorial

মোদী চক্রে সোনালির ভবিষ্যৎ

সম্পাদকীয় বিভাগ

অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেয়ে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া ৯ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা সোনালিবিবি ও তার ৮ বছরের ছেলেকে মানবিক কারণে ভারতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অবশ্য সোনালির স্বামী এবং তাদের সঙ্গে পুশব্যাক হওয়া সুইটিবিবি ও তার দুই ছেলেকে ফেরানো হচ্ছে না। মোদী সরকার ভাঙবে তবু মচকাবে না। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে মানবিক কারণে সোনালিবিবি ও তার ছেলেকে ফেরালেও সরকার মনে করে তারা ভারতের নাগরিক নয়। কিন্তু কেন তারা ভারতীয় নয় বা তারা যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সেই দাবির পক্ষে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ মোদী সরকার দেখাতে পারেনি। ভারতে বংশ পরম্পরায় বসবাসকারী কোনও ব্যক্তিকে ভারতীয় নয় বলে বা বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করতে হলে যথেষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন। কিন্তু সে প্রমাণ কোথায়? তেমনি কাউকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়ে পুশব্যাগ করতে হলেও নির্দিষ্ট কিছু বিধি অনুসরণ করতে হয়। মোদী সরকারের নির্দেশে অমিত শাহ-র দিল্লি পুলিশ সেটাও মানেনি। দিল্লি পুলিশ সোনালিদের গত ২৩ জুন দিল্লির রোহিনী সেক্টর থে‍কে তুলে নিয়ে গিয়ে অমিত শাহ-র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে বিএসএফ দিয়ে আসাম-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ধাক্কা মেরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ গোটা প্রক্রিয়াটার পেছনে রয়েছে অমিত শাহ’র মন্ত্রক।
বিষয়টি যখন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারের জন্য ওঠে তখন কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় এই পুশব্যাগ ‘অবৈধ’। নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে পুশব্যাগ হয়নি। কার্যত গায়ের জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক ও অমানবিকভাবে এই পুশব্যাগ করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় এক মাসের মধ্যে সোনালিবিবি সহ ৬জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার। মুসলিম বিদ্বেষের রাজনীতিতে ঘৃতাহুতি দিতে মত্ত মোদী সরকার কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে অস্বীকার করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। কিন্তু ধাক্কা খায় সেখানেও। আসলে মিথ্যা ও অযৌক্তিক ভিতের উপর কোনও ইমারত দাঁড় করানো যায় না বুঝেও মোদী সরকার তাদের জেদ ও গোঁ ছাড়তে রাজি নয়।
কিন্তু দুনিয়াটা যুক্তিতে চলে, কারও খেয়ালখুশিতে নয়। মোদী-অমিত শাহ’রা চাইলেই সোনালিরা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যায় না। ক্ষমতার জোরে তাদের জোর করে নিয়ে গিয়ে কিছুদিন বন্দি রেখে ভিন দেশে পুশব্যাগ করা যায়। এমন বাহাদুরিতে বুকের ছাতি ফুলতে পারে কিন্তু এই নির্মমতার জেরে মানুষগুলিকে যে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় তার হিসাব কিন্তু বকেয়া থেকে যায়। সেই মূল্য কিন্তু তাদের চোকাতে হবে।
মোদী সরকারের হুকুমে দিল্লি পুলিশ সোনালিদের বাংলাদে‍‌শি বলে আটক করেছে। তাদের কাছে আধার, ভোটার, রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও ছাড় মেলেনি। বংশপরম্পরা বীরভূমের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ যাচাই করেনি। সরকার ঘোষিত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই তাদের আসামে নিয়ে গিয়ে তড়িঘড়ি বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। সোনালির বাবা-মা রয়েছে। ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে বাবা, মা, দিদার নাম আছে। তথাপি মোদীদের বিবেচনায় তারা ভারতীয় নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে। তাই দীর্ঘদিন তাদের ঠিকানা বাংলাদেশের জেল। বাংলাদেশের আদালত বলছে তারা বাংলাদেশি নয়, ভারতীয়। ভারতের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। প্রমাণ হয়নি তারা বাংলাদেশি। এটাও প্রমাণ হয়নি তারা ভারতীয় নয়। সুপ্রিম কোর্ট আপাতত পুত্র সহ সোনালিকে ভারতে ফেরাতে বলেছে। তারা ভারতীয় কিনা পরে দেখা যাবে।

Comments :0

Login to leave a comment