Bangla Bachao Yatra

কারখানা রক্ষা করুন, বাংলা বাঁচাও যাত্রার কাছে আবেদন শ্রমিকদের

রাজ্য জেলা বাংলা বাঁচাও যাত্রা

প্রতীম দে : দমদম

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা বেজে ৩৪ মিনিট। যশোর রোডের বিটিএল কোম্পানির গেটের সামনে তখন দাঁড়িয়ে শতাধিক শ্রমিক। হাতে জলের বোতল। কারখানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলা বাঁচাও যাত্রাকে স্বাগত জানালেন তাঁরা। মুখে স্লোগান, মুষ্টিবদ্ধ হাত। সিপিআই(এম) নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে এসে একজন শ্রমিক বলেন, আপনারা পারেন শিল্প বাঁচাতে। বিটিএলের শ্রমিক দীনেশ বিশ্বাস বলেন, এখন কারখানায় যেই উৎপাদন হয় তা আগের থেকে অনেক কম। এখন ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। 
কাজের নিরাপত্তা আছে?
না। এই শ্রম কোড আসার পর আরও নেই।
দমদম, যশোর রোড জুড়ে বামফ্রন্ট আমলে গড়ে উঠেছিল একের পর এক কারখানা। আজ সব প্রায় বন্ধ। কমেছে উৎপাদন। বন্ধ হয়েছে জেশপ কারখানা। কারখানার গেটের শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন, মীনাক্ষী মুখার্জি সহ নেতৃত্ব। শ্রমিকদের কথায়, কারখানার জমির ওপর নজর পড়েছে জমি মাফিয়েদের। নেতৃত্ব আশ্বাস দেয় এই জমি রক্ষা করে এখানেই তৈরি হবে কারখানা। 
সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার নাগেরবাজার থেকে শুরু হয়েছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। শুরুতে নাগেরবাজার মোড়ে হয় সমাবেশ। মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ' এই রাজ্যে স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  ছেলে মেয়েদের কাজ নেই। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে। মানুষকে তার সমস্যা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা এই যাত্রা কোচবিহার থেকে শুরু করেছি। মানুষের সমস্যাকে সামনে রেখে এই যাত্রা।'
তিনি বলেন, বিধানসভায় আমাদের কোন প্রতিনিধি নেই। মানুষ কি ভালো আছে?  বিজেপি তৃণমূল কি করছে? মানুষের সমস্যা নিয়ে আজ কোন আলোচনা হয়না বিধানসভায়। মানুষকে প্রতিদিন বলা হচ্ছে কাগজ দেখাতে। যারা ২৬ হাজার চাকরি খেলো তারা আজ ঘাপটি মেরে বসে আছে।' তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মীনাক্ষী বলেন, ওরা চাকরি দিলেও সেটা বাতিল হয়। ওবিসি সার্টিফিকেট দিলে সেটাও বাতিল হয়।
তিনি বলেন, আজ এই বাংলায় মন্দির মসজিদের রাজনীতি চলছে, যা দেখা যায়নি আগে। আজ তৃণমূল বিজেপি সেটা করছে। গোটা যুব সমাজকে এরা বেপথে পরিচালিত করছে। আমাদের যুবরা রক্ত দিয়ে বক্রেশ্বর করেছিল। আজ তাদের ব্যবহার করে মন্দির মসজিদের রাজনীতি করা হচ্ছে।
সুভাষ চক্রবর্তী, বিমান বসুদের কলেজ দমদম মতিঝিল কলেজ। এই শিক্ষাবর্ষে মাত্র ২৬১ জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। ফিজিক্স অনার্সে একজনও ভর্তি হয়নি। 
এসএফআই এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, '২০১১ সালে যখন বামফ্রন্ট চলে যাচ্ছে তখন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হতো। কিন্তু কেউ কখনও বলেনি বামফ্রন্ট সংখ্যালঘু তোষণ করছে। এখন বাংলার রাজনীতির বিষয় বস্তু বদলে যাচ্ছে। হিন্দু মুসলিম ভাগ করা হচ্ছে। মানুষের কথা কে বলবে? কৃষক খেত মজুরদের কথাকে বলবে?
মন্দির মসজিদ তৈরি হচ্ছে। মানুষকে ধর্মের নামে ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে। 
সৃজন বলেন, বামফ্রন্টের সময় এই রাজ্যে অনেক আন্তর্জাতিক গুনী মানুষ এসেছেন। কিন্তু কখনও কোন অব্যবস্থা হয়নি।
বিজেপিকে নিশানা করে সর্বভারতীয় ছাত্র নেতা বলেন, বিজেপি আরএসএস বাংলাকে ভাঙতে চায়। 
তৃণমূল ভুয়ো নাম রাখতে চায়। আমরা ভোটার তালিকা পরিশুদ্ধ করার কথা বলে আসছি। বিজেপি এর সাথে নাগরিকত্বের কথা জুড়ে দিচ্ছে, বলছে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। থাকলে ওরা তাদের ধরে দেখাক। ভোটার তালিকায় তৃণমূলের জালিবাজি ধরতে হতো। বিজেপি তার সাথে হিন্দু মুসলিম জুড়ে দিলো। 
তৃণমূল বিজেপিকে বাড়তে দিচ্ছে কারণ ওরা ভাবছে যত ওরা হিন্দু হিন্দু করবে তত ওরা মুসলিম ভোট পাবে, মানুষ ভুলে যাবে দুর্নীতি। আমাদের এই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষের দাবিকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment