শারদীয়া ১৪৩১
গল্প
নতুনপাতা
রুমির ইচ্ছে
সৌরীশ মিশ্র
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলেন তুষারবাবু। আয়নাতেই দেখলেন, দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকছে তাঁর মেয়ে রুমি। রুমির হাতে ওর অতি প্রিয় টেডি বিয়ারটা। ছোট্ট রুমি পায়ে-পায়ে এসে দাঁড়াল ওর বাবার ঠিক পাশটায়। বাবাকে ঘাড় উঁচিয়ে দেখল সে। তারপর চোখ নামিয়ে টেডি বিয়ারটার মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে সে বলল, "বাবাই, এখনই বেরোচ্ছো তুমি?"
"এই তো একটু বাদেই বেরোবো, মা।"
তুষারবাবু চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে, এসে বসলেন একটা সোফায়। বাবার পিছন পিছন এল ন'বছরের রুমিও। এসে বসল সোফায় বাবার পাশে। সযত্নে নিজের কোলে বসাল টেডি বিয়ারটাকে। তারপর, ওটার মাথায় ফের আদর করতে করতে বলল, "তোমরা কিসে যাবে, বাবাই?"
"লরিতে, মা।"
"লরি!" একটু থামে রুমি। তারপর আবার বলে, "ক'টা লরি তোমরা নিয়ে যাচ্ছ বাবাই?
"তিনটে।"
"একটাতে দুগ্গা ঠাকুর আসবে। আর বাকি দুটোয় গণেশ ঠাকুর, কার্তিক ঠাকুর, লক্ষ্মী ঠাকুর, সরস্বতী ঠাকুর। তাই না বাবাই?"
"হ্যাঁ মা। একদম ঠিক বলেছো।"
"পাড়া থেকে অনেকেই যাচ্ছে, না বাবাই?"
"তা তো যাচ্ছেই।"
কয়েকক্ষণের জন্য আবারো চুপ করে থাকে রুমি। তারপর, ফের মুখ খোলে। ধীরে ধীরে বলে, "বাবাই, একটা কথা বলব?"
"কি? আমার সাথে কুমোরটুলি যাবে ঠাকুর আনতে, এটাই বলবে তো?"
"তুমি কি করে জানলে?" ওর বাবাই কি করে জানল ওর মনের কথা, ছোট্ট রুমির যেন বিস্ময়ের অন্ত থাকে না।
"জানব না, মা। আমি তো তোমার বাবা।" মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখেন তুষারবাবু। "কিন্তু মা, তুমি যে যাবে, কষ্ট হবে না তো তোমার? বাইরে যে ভীষণ গরম।"
"কষ্ট হবে কেন? আমি তো এইসময়ই স্কুল থেকে ফিরি।"
"আর একটা ব্যাপারও আছে কিন্তু..."
"কি ব্যাপার বাবাই?"
" তোমার মা-রও যে পারমিশন লাগবে..."
"মা পারমিশন আগেই দিয়েছে বাবাই। বলেছে, তোর বাবাই যদি নিয়ে যায়, আমার কোনো অবজেক...অবজেক..."
"অবজেকশন..."
"হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবজেকশন, অবজেকশন। বলেছে, তুমি নিয়ে গেলে মা-র অবজেকশন নেই।"
"তাহলে তো হয়েই গেল। যাও তবে মা-কে বলো, চটপট তোমায় তৈরী করে দিতে..."
আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন তুষারবাবু মেয়েকে, কিন্তু তার আগেই একেবারে তীর বেগে ঘর থেকে ছুটে বেড়িয়ে গেল রুমি "মা, ও মা" বলে চিৎকার করতে করতে।
মেয়ের কাণ্ড দেখে হেসেই ফেললেন তুষারবাবু।
Comments :0