মুক্তধারা
গল্প
ত্রিনয়নী
সৌরভ দত্ত
প্যাণ্ডেল ফাঁকা হয়ে যায়। মনখারাপের হু হু বাতাস পাক খাচ্ছে ভিড়ের মধ্যে।উৎসব চলছে তো চলছেই কখনও রাস্তা জ্যাম করে। কখনো ভার্চুয়ালি ফিতে কেটে স্বরচিত কথামৃতের ফুলঝুরিতে। পাশে বসে প্রভুভক্তরা বেশ জোরসে লেজ নাড়ে।চুপ! হ্যাঁ ভাই!উৎসব চলছে– গ্রামের মানুষ উৎসব কি সেভাবে জানে না।বাসে বাড়ি ফিরতে ফিরতে চন্দন এইসব লক্ষ্য করছিল। শহরের মহিলা সম্মিলনীর পুজোর থিম তিলোত্তমা।সেই ব্যানারের উপর ওখানকার বিধায়কের একটা বড় হোডিং চেপে গেছে। এবারের পুজোয় পুজো পুজো গন্ধ পাচ্ছে না চন্দন । শিউলি শুভেচ্ছা নেই।উল্টে দগ্ধ নরদেহর গন্ধ চারিদিকে।পাখির ছিন্ন ডানার ক্রন্দন।
জয়নগর একসময় মোয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল।এখন চরিত্র পাল্টে জায়গাটা ভয়নগর হয়ে গেছে।প্রতি বছর ঝাঁকামাথায়–মোয়া চাই মোয়া–জয়নগরের মোয়া– হাঁক পাড়তে নিখিল কাকু মোয়ার পরসা আর মাটির পাইয়ে খেজুরগুড়নিয়ে হাজির হত চন্দনদের বাড়ি।তার ঠাকুমাকে মোয়া দিয়ে যেত।চন্দন এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে। কলেজ স্ট্রিটে একটা বুটিক চালায়।একটি পোষাক প্রস্তুত কারক সংস্থার সাথে যুক্ত।গ্রামের গরীব মেয়েদের দিয়ে জামাকাপড়ে হরেকরকম ডিজাইন করে নিয়ে গিয়ে শহরের আউটলেটে বিক্রি করে।এ বছর দুর্গার রূপং দেহি ছবির সাথে উই ওয়ান্ট জাস্টিসের ডিম্যান্ড বেশি। বিশেষত–গেঞ্জি, পাঞ্জাবি,কুর্তিতে প্রতিবাদী স্লোগান ও ছবি ফুটে ওঠে। অনলাইনে ও প্রি-বুকিং চলছে।হঠাৎ সেদিন চন্দন দেখল জয়নগর কাণ্ডের বিরুদ্ধে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে ছাত্র-যুব-মহিলাদের মিছিলে পুলিশ বেমক্কা লাঠিপেটা করল ,কয়েকজন ছেলেমেয়ের মাথা ফাটল, জামাকাপড় টেনে হিচড়ে ছিঁড়ে দিল কালো মুখোশে মুখ ঢাকা পুলিশ। রাতে টিভিতে চোখ রাখল চন্দন দেখল একজন বাইট দিচ্ছে–এসব একটা দুটো বিক্ষিপ্ত ঘটনা –মনে হয় ওরা এ.আই দিয়ে করিয়েছে। টিভির স্ক্রিনে নিচের দিকে চারচৌকো বক্সে ছোট্ট একটা উমার মুখ ফুটে উঠেছে। চন্দন আর খেতে পারে না খাবার ফেলে উঠে পড়ে।
গল্পের ভিতরে অনুপ্রবেশ করে গল্প—তুই এগো আমি যাচ্ছি। টিউশন থেকে ফেরার পথে বন্ধুকে বলেছিল মেয়েটা।আকাশে সেদিন বৃষ্টির কালো ভ্রুকুটি।সেদিন বদমাশ কেউ নামিয়ে দিয়েছিল ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার হ্যান্ডেল। চারিদিকে ঘন অন্ধকার নেমে আসে। রাস্তার পাশের খালের জলে শাপলা,শালুক ফুটে আছে ওখানে। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যায়। বাড়ির লোক অপেক্ষায় থাকে।না ,মেয়েটা বাড়ি ফেরেনি।
চন্দনদের পাশের পাড়ায় ‘নবারুণ সংঘ’-এ বছর দুয়েক হল একটা নতুন পুজো গজিয়েছে। কমিটির মেন হত্তাকর্তা বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক মাতব্বর।ওরা ঘুরপথে পঁচাশি হাজার পেয়েছে।বদলে কতগুলো দাবি পূরণ করতে হয়েছে প্রশাসনের ।মণ্ডপে সি.সি টিভি লাগানো হয়েছে।ইয়া বড়ো ব্যানারে সর্বক্ষণ মহিষাসুর হাসছে। সারাক্ষণ পিসিদিদার লেখা প্রশস্তি সূচক গান বাজছে। মণ্ডপের পাশে প্রভাবশালীদের এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য ছোট একটা কাউন্টার হয়েছে।চন্দন এসব আড়চোখে দেখে।ওর বাবার থেকে সেদিন জোর করে ঝন্টুরা দশ হাজার নিয়ে গেল।বলল–এখানে থাকতে হলে এসব একটু আধটু দিতে হবে সরকার বাবু।
সমাপ্ত আগামী সংখ্যায়
Comments :0