ধর্মকে আশকারা দিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল যেভাবে সাধারণ মানুষের রুজি রোজগারের ওপর আঘাত হানছে তাকে রুখবে বামপন্থীরাই। লাল ঝান্ডার সেই লড়াই দমানো যাবে না— এই কথাটা যেন মনে রাখে ওই দুই দল। কারণ এই অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমশ আরও বাড়ছে বামপন্থীদের ওপর। রবিবার উল্টোডাঙ্গায় সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেন।
এদিন উল্টোডাঙ্গায় সিপিআই(এম) মানিকতলা ২ এরিয়া কমিটির সদস্য, শ্রমিক আন্দোলন ও বস্তি আন্দোলনের নেতা কমরেড সৌমেন দে (বাপী)’র স্মরণে এক স্মরণসভা আয়োজিত হয়। প্রয়াত পার্টিকর্মীর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, সিপিআই(এম) ও সিআইটিইউ নেতৃত্ব ও কর্মীরা। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন রুপা বাগচি, দেবাশিস রায়, সংগ্রাম চ্যাটার্জি প্রমুখ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জয়দীপ ভট্টাচার্য। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রাজীব মজুমদার।
মহম্মদ সেলিম প্রয়াত কমরেড সৌমেন দে’কে স্মরণ করে বলেন, চোখের জল দিয়ে নয়, সৌমেন দে-কে তাঁকে স্মরণ করতে হবে কাজের মধ্য দিয়ে। বামপন্থী হিসাবে যে কাজ তিনি করেছেন, যেভাবে করেছেন তা অনুসরণযোগ্য। আদর্শের জন্য সারা জীবন মার খেয়েছেন, জেল খেটেছেন, কিন্তু লাল ঝান্ডাকে ছাড়েননি। সেই আদর্শ অনুসরণযোগ্য। সারা জীবন আমরা আগে কি দেখেছি? আমরা দেখেছি লাল ঝান্ডা লড়ছে রুটি রুজির জন্য, সবার সমান অধিকারের জন্য। শিক্ষার প্রসার থেকে সম্প্রীতির বার্তা লাল ঝান্ডা হাতে ধরা বামপন্থীরাই দিয়েছে। আর এখন সেসব বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন চারদিকে আলোচনা হয় ধর্ষণ নিয়ে, আলোচনা হয় আদিবাসী মহিলার দণ্ডি কাটা নিয়ে, ডাইন অপবাদ দেওয়া নিয়ে। মাথা চাড়া দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভয় দেখিয়ে হামলা হচ্ছে, কালা কানুন দিয়ে কোণঠাসা করা চলছে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে।
সেলিম বলেন, তৃণমূল আর বিজেপি হাত মিলিয়ে এসব কাজ করে চলেছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সকলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা সবচেয়ে জরুরি। বামপন্থীদের লক্ষ্য জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা। তাহলেই ফায়দা লোটা কোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের সুবিধা কায়েম করতে পারবে না। বিজেপি-তৃণমূলের উপঢৌকনের রাজনীতি বা রাজনীতির দোকানদারি চলতে দেওয়া যাবে না। এজেন্টরা চাকরির নামে টাকা লুটবে আর যোগ্যরা বঞ্চিত থেকে ধরনায় বসবে- এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। হাতে কিছু ভাতা গুঁজে দেওয়া সরকারের কাজ নয়, সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা, সকলকে সুরক্ষা দেওয়া সরকারের কাজ। বিরোধীদের দমিয়ে রেখে যা খুশি করা যাবে না, এটা বুঝিয়ে দিতে হবে। সরকার যদি তাদের কোনও দায়িত্ব পালন না করে তাহলে আগামী দিনে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে লাল ঝান্ডা হাতে বামপন্থীরা।
গত ১৩ ডিসেম্বর ৫৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন কমরেড সৌমেন দে। মানিকতলা-উল্টোডাঙা অঞ্চলের বিভিন্ন কলোনি এবং বস্তি এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে পার্টির যোগসূত্র আরও বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। নির্মাণ শ্রমিক থেকে রেল হকার, দোকান কর্মচারী সহ বিভিন্ন সংগঠন শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য তাঁকে একসময় জেলবন্দি হতে হয়েছিল। সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন আজীবন। দক্ষ সংগঠক ছিলেন সৌমেন দে।
তাঁকে স্মরণ করে এদিন রূপা বাগচী বলেন, সৌমেন দে’র মতো কমরেডরা নানা দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের সামনে। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষণীয় হলো মূল্যবোধ। মানুষের প্রয়োজনে কিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়, কিভাবে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে অশান্ত সময়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে হয়- তা আমরা তাঁর জেনেছি তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে। সেইসব কাজ এখন আমাদের সামনে রয়েছে। তা পালনের মধ্যে দিয়েই আমরা আরও বেশি করে স্মরণ করব তাঁকে।
Md Salim
বামপন্থীদের ওপরে মানুষের বিশ্বাস বাড়ছে: সেলিম
.jpeg)
×
Comments :0