Trump Ceasefire

ভারতের ঠিকাদারি কি ট্রাম্পের হাতে

সম্পাদকীয় বিভাগ

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ভারতের স্বঘোষিত সুপার প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন! পাক-ভারত সামরিক আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা যেভাবে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং ভারতের প্রতিনিধি বা মুখপাত্রের মতো একের পর এক সিদ্ধান্ত ও অবস্থান ঘোষণা করে চলেছেন তাতে এমনটা মনে হতেই পারে মোদী সরকার তাঁকে সেই ছাড়পত্র দিয়েছে। ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। দেশে কোথায় কতটা সামরিক হস্তক্ষেপ করবে, দেশের স্বার্থে কতটা  সামরিক অভিযান চালাবে, কখন যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত নেবে এবং কোন শর্তে নেবে সবটাই ভারতের নিজস্ব বিষয়। এখানে নাক-গলানোর, উপযাজক হয়ে উপর চালাকি করার কোনও অধিকার নেই; সে আমেরিকা হোক বা ইজরায়েল। আন্তর্জাতিক  রীতিনীতিকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে কোনও দেশ চাইলে  কোনও পরামর্শ বা মতামত দিতেই পারে কিন্তু চাপের মুখে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করাতে পারে না। স‍‌র্বোপরি ভারতের  সিদ্ধান্ত ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষণা করা হবে। স্বাধীনতার পর থেকে এমনটাই দুনিয়া দেখে এসেছে। এবার তার ব্যত্যয় ঘটল ৫৬ ইঞ্জি  জাতির বিশ্বগুরুর জমানায়।
গত মাসের ২২ তারিখে পহেলগামে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পর  সন্ত্রাসবাদী  ও সন্ত্রাসবাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সামরিক আঘাত হিসাবে পাক সীমান্তের ওপারে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতের সেনাবাহিনী। তার পালটা আঘাতও হানে পাকিস্তান। ফলে দু’দেশের যুদ্ধের উন্মাদনা তীব্র আকার নেয় এবং দু’দেশই  পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে নেমে পড়ার উপক্রম হয়। এমন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজে‍‌দের আখের গোছাতে আসরে নেমে পড়ে ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের  ছিল শকুনরা। অনেকটা দাদাগিরির ঢঙে দু’দেশের ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে যুদ্ধ বিরতির চাপ দিয়ে। তারজন্য একদিকে যেমন বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সাহায্য করার লোভ দেখায় অন্যদিকে তেমনি নানাদিক থেকে চেপে ধরার ও ‍ বেকায়দায় ফেলারও ভয় দেখায়। এই চাপের কাছে কার্যত মাথা নত করে আমেরিকার নির্দেশ মতোই  যুদ্ধ বিরতিতে সম্মতি জানায় মোদী সরকার।
যুদ্ধের মধ্যেই ট্রাম্প বার বার বলছেন দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে, শীঘ্রই সমঝোতা হবে। ঘোষণা যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প নিজে। মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন নিরপেক্ষ কোনও জায়গায় দু’দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসে সমাধান খুঁজবেন। অতঃপর  ট্রাম্প জানিয়ে দেন কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত  বিরোধের মীমাংসায় তিনি মধ্যস্থতা করতে তৈরি। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন সমস্যা তিনি মেটাতে পারবেন। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য, দু’-তিন দিন ধরে  ট্রাম্প একতরফাভাবে ভারতে নিজস্ব বিষয়ে এবং পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে নিজের মতো করে কথা বলে গেলেও  মোদীর ভারতের  তরফে টু শব্দটিও করা হয়নি। না করা হয়েছে বিরোধিতা, না  সমর্থন। দুনিয়া দেখছে বিশ্ব গুরুর মেরুদণ্ডহীন  নীরবতা। 
সেই প্রথম থেকে কাশ্মীর প্রশ্ন ভারত দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলেই নীতিগত অবস্থান নিয়েছে। তৃতীয় কোনও দেশের নাক গলানোকে সরাসরি  প্রত্যাখ্যান করেছে। এবার ট্রাম্প দৃষ্টিকটূভাবে নাক গলাতে থাকলেও মোদীরা কোনও প্রতিবাদ করছেন না। কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান-সিদ্ধান্ত দুনিয়াকে ভারতের আগে শোনাচ্ছেন ট্রাম্প। মোদীরা কি ভারতের ঠিকাদারি ট্রাম্পের হাতে  তুলে দিয়েছেন? দুনিয়ার কাছে ভারতের মান-মর্যাদা, আত্মসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিতে চাইছেন? জবাব চায় দেশবাসী।

Comments :0

Login to leave a comment