সুদীপ্ত বসু, পলাশী
'তমন্নার কবরের মাটি ছুঁয়ে শপথ, এরাজ্যের জঙ্গলরাজের অবসান ঘটাবই।’ মঞ্চের পিছনে টাঙানো এই ব্যানার। তমন্নার মা বলেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দকে, এই দুষ্কৃতীদের বাংলাছাড়া করতে হবে। লড়াইয়ের সেই শপথেই পলাশি অশোকা সিনেমার সামনে হয়েছে সমাবেশ। শান্তি-সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারর ‘তমন্না’ জানিয়েছে সেই সমাবেশ।
পুরো এলাকা ভেসে গিয়েছে জন সমাগমে। পলাশী স্টেশন থেকে একের পর এক মিছিল গিয়েছে সমাবেশে। ক্ষোভের কেন্দ্রে তৃণমূল সরকারের পুলিশ এবং প্রশাসন। দুষ্কৃতীদের পুলিশি মদতের প্রতিবাদ বারবার জানিয়েছে মিছিল, সমাবেশ।
বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই এম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে, মীনাক্ষী মুখার্জি সিপিআই(এম) নেতা জামির মোল্লা, অলকেশ দাস, রমা বিশ্বাস, এসএম সাদি সহ নেতৃবৃন্দ। ছিলেন পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোমও। ছিলেন কালীগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখও।
এদিন সকাল থেকেই ভিড় মোলান্দিতে। তমন্নার বাড়িতে গিয়েছেন সেলিম, মীনাক্ষী সহ নেতৃবৃন্দ। গিয়েছে পার্টি কর্মীরা।
সেলিম সমাবেশে বলেছেন,
পুলিশ এসপি ওসি বিডিও এসডিও সংবিধান মেনে কাজ করছে না। প্রশাসন গুন্ডাদের কথায় চলছে। প্রশাসন ব্যর্থ। এই হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। ’’
সেলিম বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে কালীগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী ও স্থানীয় নেতৃত্ব প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে বোমা অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে। পুলিশ কেন সেই বিষয়ে নজর দেয়নি। গ্রামের মানুষ বলছে পঞ্চায়েতে তৃণমূল জিততে পারেনি। তাই ওদের এত রাগ। অস্ত্র নিয়ে ভোটের আগে ভয় দেখিয়েছে ধমকি দিয়েছে। পুলিশ কী করছিল, পুলিশ আইন মেনে চলছে না।’’
শনিবার পলাশীতে জনসমাবেশের একাংশ।
সেলিম বলেন, "রাজ্যের মানুষের মান সম্মান রক্ষা করতে পারে না এই পুলিশ। আইনের কলেজের ভেতরে এক ছাত্রীর ধর্ষণ হয়ে গেল।’’ তমন্না হত্যার ঘটনায় তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথমে বলেছিল বোমার আঘাতে মারা গিয়েছে তমন্না। পরে বয়ান বদলে ফেলে পুলিশ। পুলিশের গাফিলতি ধরা পড়ে ।এখানে যে মাত্র চারটি বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। যে বিপুল অস্ত্র ভাণ্ডার তার হদিস পুলিশের কাছে নেই। আমরা বলছি আর যাতে কোন তামান্না খুন না হয়, তার জন্য লড়াই সংগ্রামে থাকবো আমরা।’’
তামান্নার মায়ের ভূমিকায় সেলিম বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যের মানুষ তামান্নার মাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। এক বিধায়ক টাকা নিয়ে কিনতে এসেছিল। ফিরিয়ে দিয়েছেন মা। যেভাবে আনিস খানের পরিবারকে কিনতে চেয়েছিল রাজ্যের সরকার একই কায়দায় এখানেও বকলমে টাকা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতিবাদীদের, সিপিআই(এম)-কে লাল ঝান্ডাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।’’
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘গুণ্ডারাজের রাজনীতি বর্জন করছি আমরা। তমন্নার মা গুণ্ডারাজ মুক্ত রাজ্য চেয়েছেন। আমরা শপথ নিচ্ছি, তার জন্য চলবে লড়াই।’’
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘এই দুষ্কৃতীদের এলাকাছাড়া করতে হবে। পয়সা দিয়ে সব লাশ কেনা যায় না।’’ মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘যে রাজনীতি বাড়ি বাড়ি বোমা তৈরি করে তা এ বাংলার রাজনীতি হতে পারে না। যে রাজনীতি কলেজে ধর্ষণের কারণ, হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ হত্যা ঘটায়, তা এ বাংলার রাজনীত হতে পারে না।’’
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘দুষ্কৃতী-পুলিশের যোগসাজশে এই রাজনীতি লুটে খাওয়াদের মাথায় ছাতা ধরে। খেটে খাওয়াদের পেটে লাথি মারে। এই রাজনীতি বদলাতে হবে।’’
Comments :0