EC Citizenship

২০০৩ সালের পর নথিভুক্তদের প্রমাণ দিতে হবে নাগরিকত্বের!

জাতীয় রাজ্য

 ভোটার তালিকায় সার্বিক সংশোধনের নামে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে ভোটারদের!
বিহার নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিহার বিধানসভার ভোট। তার আগে বিহারের জন্য ‘এসআইআর’ (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) অর্থাৎ ভোটার তালিকার বিশেষ সার্বিক সংশোধন করার কাজে নামছে নির্বাচন কমিশন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার সংশোধন করার জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০০৩ সালের পরবর্তী সময়কালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সকলকেই ফের নাগরিকত্ব প্রমাণের তথ্য দিতে হবে। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়েই তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। 
বিহারের জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন আগামীদিনে গোটা দেশের জন্য এই সার্বিক ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযানে নামবে। সেখানেও ২০০৩ সালকেই সময়সীমা হিসাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিহার বিধানসভার পরেই পরপর পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম, কেরালা, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু সব মিলিয়ে ছয় রাজ্যের বিধানসভা ভোট হবে। এই ছয় রাজ্যেও বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকার সার্বিক সংশোধন অভিযানে ২০০৩ সালের পরবর্তী সময়ে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাঁদের প্রত্যেককেই ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিলে তবেই নাম উঠবে তালিকায়। 
গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রচারে এসে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিগির তৈরি করার জন্য একাধিক জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রবেশের কারণে এরাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় জনবিন্যাসের দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচনও কমিশনও যেভাবে ভোটার তালিকায় সংশোধনের নামে নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি দেওয়ার কথা বলছেন তাতে আশঙ্কা বাড়ছে। 
২০০৩ সালকেই কেন সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হলো?
ঘটনা হলো, ২০০৩ সালে এনডিএ সরকারের আমলে সংশোধিত হয়েছিল ভারতের নাগরিকত্ব আইনের। অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সেই সরকারের শরিক ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইনের আগে দেশে ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাই মাসের পর ধর্ম, সম্প্রদায় যারাই ভারতেবর্ষে প্রবেশ করবেন, জন্মসূত্রে না হলেও রেজিস্ট্রেশন, স্বাভাবিক নিয়মে বা দেশীয়করণের পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু ২০০৩ সালের সংশোধিত আইনে বৈধ কাগজ ছাড়া দেশে থাকলে তিনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত হবেন। ফলে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বহু বৈধ ভোটারের নাগরিকত্ন প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়তে চলেছে। কমিশনের একতরফা এই সিদ্ধান্তকে এনআরসি’র ছায়া বলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। 
নির্বাচন কমিশনের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিহারে ২০০৩ সালেই সর্বশেষ বাড়ি, বাড়ি উপস্থিত হয়ে সার্বিকভাবে ভোটার তালিকার সংশোধন করা হয়েছিল। তাই সংশোধন করে নতুন ভোটার তালিকায় যাতে একমাত্র দেশের নাগরিকরাও তালিকায় থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমিশনের যুক্তি, দ্রুত নগরায়ন, ঘন ঘন ভোটারদের এলাকা ছাড়া ও নয়া ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করার পাশপাশি তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিশন উল্লেখ করেছে, ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের সঙ্গে অনুপ্রবেশমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 
ভোটার তালিকা সংশোধন করার প্রক্রিয়ায় ২০০৩ সাল পরবর্তী সময়ে নাম থাকা ভোটারদের কী করতে হবে? বিহারের জন্য কমিশনের সিদ্ধান্ত, কমিশনের প্রতিনিধি হিসাবে যাওয়া বিএলও-দের (বুথ লেবেল অফিসার) কাছে জমা দিতে হবে একগুচ্ছ নথি। ২০০৩ সালের আগে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল না, তাঁদের জন্মস্থানের প্রামাণ্য নথি জমা দিতে হবে। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের পর যাঁদের জন্ম তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় সংযোজিত করতে হলে নিজের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের নাগরিকত্বের নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিহারের জন্য একের পর এক নাগরিকত্ব প্রমাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা কমিশন ঘোষণা করলেও পরবর্তীকালে এরাজ্যেও তা কার্যকর হবে।
গোটা প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নির্বাচন কমিশন আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। এবারই গোটা দেশের ভোটার তালিকা সংশোধন কাজের জন্য বিএলও হিসাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বুথ এলাকার সরকারি গ্রুপ-এ থেকে গ্রুপ-সি কর্মচারীদের যুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতদিন এরাজ্যে মূলত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বিএলও পদে নিয়োগ করা হতো। কিন্তু এখন যেভাবে নাগরিকত্বের নথি যাচাই করে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে নামছে তাতে অতীতের মতো অস্থায়ী কর্মচারী বিশেষত আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে বিএলও’র দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। তাই সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহার করেই ভোটার তালিকার সার্বিক সংশোধন অভিযানে নামতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। 
বিহারের পাশপাশি এরাজ্যেও নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে চিঠি এসেছে। বিহার নিয়ে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত জানার পর বুধবার দীঘায় তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে আপত্তিজনক জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘বিহারে বিজেপি সরকার আছে। ওখানে কিছু করবে না। ওরা (কমিশন) বাংলাকে টার্গেট করেছে। এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম বাদ দেওয়া ওদের লক্ষ্য। কোনও জাতীয় কিংবা রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে এই সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা উচিত।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment