JOURNEY — KRISHANU BHATTACHARJEE — PADMA PARE RABINDRANATH — MUKTADHARA — 17 MAY 2025, 3rd YEAR

ভ্রমণ — কৃশানু ভট্টাচার্য্য — পদ্মা পারে রবীন্দ্রনাথ — মুক্তধারা — ১৭ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

JOURNEY  KRISHANU BHATTACHARJEE   PADMA PARE RABINDRANATH  MUKTADHARA  17 MAY 2025 3rd YEAR

ভ্রমণ মুক্তধারা, বর্ষ ৩

পদ্মা পারে রবীন্দ্রনাথ 
 

কৃশানু ভট্টাচার্য্য

 

সময়টা ১৮৯২ এর ৮ ই এপ্রিল। শিলাইদহে পদ্মা বক্ষে বোটের থেকে রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখছেন ইন্দিরা দেবীকে। বলছেন এখানে এসে তিনি 'এলিমেন্টস অফ পলিটিক্স' আর 'প্রবলেম অফ দা ফিউচার' নামে দুটি বই পড়ছেন।‌ কারণ পদ্মার বুকে ওই গরমে তার মনে হয়েছে ইংরেজি নভেলের উগ্রতা পদ্মার চরের স্নিগ্ধশোভা কে আর চারদিকের নিস্তব্ধতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। তারপরই বলেছেন," এখানে পড়বার উপযোগী রচনা হলো বৈষ্ণব কবিদের ছোট ছোট পদ।" 
১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাবার পরে বলেছিলেন পদ্মাচরের ওই দিনগুলি না পেলে তাঁর সাহিত্য সম্পূর্ণ হতো না। রবীন্দ্রনাথের জীবনে জমিদারিকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের বিরহামপুর , কালীগ্রাম এবং শাহজাদপুর পরগনায় যাতায়াত তৈরি  করেছিল এক প্রকৃতির সঙ্গে বিরল যোগাযোগ। বিরহামপুর পরগনার কাছারি ছিল শিলাইদহ তে। কালিগ্রামের কাছারি ছিল পতিসরে। আর শাহজাদপুর গ্রামের নামেই পরগনা। 
এখানে এসে কবি চিনলেন বাংলার গ্রামকে ,বাংলার গ্রামের মানুষ কে ।‌ ছোট ছোট চিঠিপত্রে আপনজনদের লিখছেন প্রজারা যখন সসম্ভ্রমে কাতর ভাবে তাঁর কাছে দরবার করে তখন তিনি বড় অসহায় হয়ে পড়েন। তারা হয়তো মনে করেন তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। ‌ আর তিনি নিজে মনে করেন, " অন্তরের মধ্যে আমিও যে এদের মতো দরিদ্র সুখদুঃখ কাতর মানুষ, পৃথিবীতে আমারও কত ছোট ছোট বিষয় দরবার , কত সামান্য কারণে মর্মান্তিক কান্না, কত লোকের প্রসন্নতার উপর জীবনের নির্ভর! এই সমস্ত ছেলে পিলে গরু লাঙ্গল ঘরকন্যাওয়ালা সরল হৃদয় চাষাভুষোরা আমাকে কি ভুলই জানে! আমাকে এদের সমজাতি মানুষ বলেই জানে না। এই ভুলটি রক্ষা করবার জন্য কত সরঞ্জাম রাখতে আর কত আড়ম্বর করতে হয় । কি জানি যদি ওই ভুলে আঘাত লাগে! প্রেস্টিজ মানে হচ্ছে মানুষ সম্বন্ধে মানুষের ভুল বিশ্বাস। ‌ আমাকে এখানকার প্রজারা যদি ঠিক জানতো, তাহলে আপনাদের একজন বলে চিনতে পারতো, সেই ভয়ে সর্বদা মুখোশ পরে থাকতে হয়।" 
পদ্মাবক্ষে যখন জমিদার বাবুর নৌকা বাঁধা থাকে মাল্লারা উত্তর দেয় জমিদার বাবু এসেছেন হাওয়া খেতে। আর কবি বলছেন, " এসেছি হাওয়ার চেয়ে আরো ঢের বেশি কঠিন জিনিসের জন্য।" 
শাহজাদপুরে ১৯ আষাঢ়,  ১২৯৯ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তার সেই আভ্যন্তরীণ সংকটকে কেন্দ্র করে বহু পঠিত কবিতা' দুই পাখি।' এখানে খাঁচার পাখির সঙ্গে বনের পাখির দ্বন্দ্ব। রবীন্দ্রনাথের ভিতরের মানুষ আর বাইরের মানুষ যে সংঘাতে বারে বারে জীর্ণ ও পরাজিত কবিতার মধ্যে তারই ছায়া। 'দুজনে কেহ কারে, বুঝিতে নাহি পারে'- মনের এই সংকটকে রবীন্দ্রনাথ ফুটিয়ে তুললেন এই কবিতায়। ‌ এই সংকট বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চিরকালের দ্বন্দ্ব। ‌ একজন বন্ধন অসহিষ্ণু , স্বেচ্ছাবিহারপ্রিয় পুরুষ আর আরেকজন বাইরের জগতের নানা ধরনের টানাটানিতে সদা বিব্রত।

পদ্মার জীবন কেবলমাত্র কবিতার ছন্দ রচনা কিংবা জমিদারি যন্ত্রচালনা নয়। ‌ পদ্মার জীবনে রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন জীবনের বহু উত্তর না পাওয়া প্রশ্নের সমাধানের সূত্র। আর সে কারণেই পদ্মা রবীন্দ্রনাথের জীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

Comments :0

Login to leave a comment