Police attacked on SFI & DYFI

নিশিগঞ্জে বন্ধ কলেজ খোলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র- যুবদের পুলিশের লাঠিচার্জ, নিন্দা সর্বত্র

রাজ্য জেলা

জয়ন্ত সাহা
বন্ধ কলেজ খোলার দাবিতে ছাত্র- যুবদের অবরোধে নিশিগঞ্জে বুধবার পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার ডাক দিল এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই। ছাত্র- যুবদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার নিন্দায় সরব হলো এবিটিএ, এবিপিটিএ ও ওয়েবকুটা।
সেল্ফ ফিনান্স স্ট্যাটাসের কলেজ নিশিগঞ্জে বন্ধ হয়ে গেছে গত ১০ জুলাই। সেই কলেজকে সরকার পোষিত ঘোষনা করে খোলার দাবিতে বুধবার এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই পথ অবরোধের ডাক দিয়েছিল নিশিগঞ্জে। একই দাবিতে খানিক দূরেই একই রাস্তায় পথ অবরোধে বসেছিল বন্ধ হয়ে যাওয়া কলেজ পড়ুয়ারা। এদিন দুই অবরোধে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে মাথাভাঙা- কোচবিহার রাজ্য সড়ক। অবরোধের শুরু থেকেই পুলিশ থাকলেও। প্রায় ঘন্টা চারেকের মধ্যে সরকারি কোন আধিকারিক কথা বলতে আসেনি বন্ধ কলেজের পড়ুয়া ও ছাত্র- যুব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বিকেল সাড়ে তিনটেয় মাইক যোগে কোন ঘোষনা ছাড়াই পুলিশ অবরোধ তুলে দিতে হঠাৎ অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাস্তার দুই দিক থেকে লাঠি উঁচিয়ে ঘিরে ধরে আন্দোলনকারীদের।


কলেজ পড়ুয়া ছাত্র- ছাত্রীদের অবরোধ পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে আসতেই উঠে যায়।কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা প্রতিরোধ গড়তে না পারলেও ছাত্র-যুবরা পুলিশ দুদিক থেকে ঘিরে ফেলার পরেও বুক চিতিয়ে অবস্থানে অনড় ছিল। আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবরা পিছু না হটায় 
পুলিশের বিরাট বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্র- যুবদের ওপরে। বিনা প্ররোচনায় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। প্রথম দিকে লাঠি চার্জের মধ্যেই ছাত্র- যুবরা রাস্তায় শুয়ে পড়ে অবরোধ চালিয়ে যেতে থাকলে আরও বেপরোয়া হয় পুলিশ। পুলিসের লাঠির আঘাতে অন্তত ১০ জন ছাত্র- যুব জখম হন। এদের মধ্যে দুজন যুবতীও ছিলেন। জখম যুব নেত্রী স্বরুপা সরকার ও রিহানা পারভীনকে রাস্তার ওপরেই প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে মারতে দেখা যায় পুরুষ পুলিশদের। মহিলা পুলিশ থাকলেও তারা সব দেখে হাসছিলেন। পুলিশ অফিসারেরা আন্দোলনকারীদের তুই-তোকারি করে গালিগালাজ করছিল প্রকাশ্যেই। পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন ছাত্র নেতা হৃষিকেশ রায়,আকাশজিৎ রায়,ফিরোজ ইসলাম।আহতদের নেতৃত্ব নিশিগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। হৃষিকেশ রায়কে পুলিশ লাঠি দিয়ে মারতে মারতে লাঠি ভেঙ্গে টুকরো হয়ে গেলে অন্য পুলিশ এসে মারতে শুরু করে।
পুলিশের নির্বিচারে বেপরোয়া লাঠিচার্জেও একজন ছাত্র- যুব কর্মীও এদিন রাস্তা ছেড়ে চলে যায়নি। এদিনের বিক্ষোভ অবরোধে নেতৃত্ব দেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রাঞ্জল মিত্র, সভাপতি জিৎ কুমার পাল, ডিওয়াইএফআই জেলা সম্পাদক ইউসুফ আলী, সভাপতি মানস বর্মন।


ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা নিশিগঞ্জে ছাত্র- যুবদের অবস্থানে বিনা প্ররোচনায় পুলিসের বর্বরোচিত লাঠি চার্জের নিন্দা করে বলেন, "রাজ্য সরকার কলেজগুলিতে গুন্ডারাজ কায়েম করেছে।শুধু নিশিগঞ্জ নয় সারা রাজ্যেই স্কুল কলেজ তুলে দিতে চাইছে। শিক্ষা ব্যবস্থা এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। এই বর্বোরচিত হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলায় এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল সভা করবে ছাত্র- যুব সংগঠন।"
এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রনয় কার্জী ঘটনার নিন্দা করে বলেন, "মাথাভাঙার পুলিস তৃনমুলের নির্দেশে কলেজ খোলার দাবিতে ছাত্র- যুবদের আন্দোলন ভাঙতেই লাঠিচার্জ করেছে।যুব নেত্রীদের পুরুষ পুলিশের লাঠিচার্জ প্রমান করেছে রাজ্যে আইনের শাসন নেই। যা আছে সেটা হল তৃনমুলের দলদাস পুলিশি শাসন। কলেজ খোলার দাবি নিয়ে ফের আন্দোলন হবে নিশিগঞ্জে। পুলিশি  আক্রমন যত তীব্র হবে আন্দোলন তত তীব্র হবে।"


এসএফআই জেলা সম্পাদক প্রাঞ্জল মিত্র বলেন, "নিশিগঞ্জ মধুসুদন হোড় কলেজ সেল্ফ ফিনান্স কলেজ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছিল ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই কলেজ সরকার পোষিত হবে। ২০১১ সালে সরকার বদলের পর তৃনমুল সরকার এই কলেজকে আর সরকার পোষিত করেনি। কলেজের ৩০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ বারবার শিক্ষা দপ্তরে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী থেকে অভিষেক ব্যানার্জি প্রত্যেকের কাছেই আবেদন গেছে কলেজকে সরকার পোষিত করার জন্য। সে আবেদনে তারাও সাড়া দেননি। গত বছর থেকে অন লাইন পোর্টালে ভর্তি শুরু হলে এই কলেজের নাম সেখানে ছিল না এরপর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। যে কলেজে এক সময়ে ৩৩০০ পড়ুয়া ছিল সেই সংখ্যা ৩০০ তে নেমে আসে। এবারে মাত্র ২৮ জন স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। গত তিন বছর ধরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কোন ভাতা না পেয়ে গত ১০ ই জুলাই কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে চাবির গোছা কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা তৃনমুলের জেলা সাধারন সম্পাদক প্রদীপ রঞ্জন রায়ের হাতে তুলে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল তারা আর বিনা,বেতনে পড়াতে পারবেন না। এর পরেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন সেমিস্টারের ৩০০ শতাধিক পড়ুয়ার ভবিষৎ। বাধ্য হয়েই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র- যুব সংগঠন আন্দোলনে নেমেছে।"

Comments :0

Login to leave a comment