মিডিয়ায় মোদী নিয়ে কার্টুনের পোস্ট বা নির্বাচন কমিশনের বেনিয়মের খবর প্রকাশ, কোনোটাই বরদাস্ত করবে না বিজেপি এবং আরএসএস। বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য মধ্য প্রদেশে বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট হেমন্ত মালভিয়ায় মোদী নিয়ে কার্টুন পোস্ট করায় আরএসএস’র অভিযোগে পুলিশ তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এনিয়ে মামলায় কার্টুনিস্ট মালভিয়াকে তার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে পুলিশের জুলুম থেকে অন্তর্বর্তী কালিন সুরক্ষা মঞ্জুর করেছে। এদিকে বিহারের বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের সরকার বিশিষ্ট সাংবাদিক অজিত অনজামের নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার নাম সংশোধনে যে বেনিয়ম চালাচ্ছে তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের পুলিশি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি এবং আরএসএস যেভাবে কার্টুনিস্ট থেকে সাংবাদিক সকলের মত প্রকাশের কন্ঠরোধের পুলিশি অভিযান শুরু করেছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং লেখক শিল্পী সংগঠন।
মধ্য প্রদেশে মে মাসে কার্টুনিস্ট মালভিয়া তার সোশাল মিডিয়ায় মোদীকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন। যদিও তা করোনার সময়ের পুরানো কার্টুন। সেই পোস্ট এবং তাতে কিছু সরকার বিরোধী মন্তব্য থাকায় তা নিয়ে আরএসএস নেতা বিনয় যোশী মধ্য প্রদেশে ইন্দোরের লাসুদিয়ে থানায় সেই কার্টুন হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশ মালভিয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়। এতে মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান মালভিয়া। হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করায় তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান মালভিয়া। তাঁর আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার জানান এই মামলা হলো, আসলে বাজে ভাষা প্রয়োগ নিয়ে। কিন্তু পুলিশ কি তা নিয়ে এফআই আর দায়ের করে একটা ফৌজদারি মামলার বিষয় করতে পারে? কার্টুনের ভাষা কি অবৈধ বা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে? তিনি বলেন, এই কার্টুন কারো কাছে খারাপ মানের হতে পারে। যা গ্রহণযোগ্য না হতে পারে। কিন্তু এটা কি চরম অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে? তিনি বলেন, বিচারপতিরা বলছেন এটা আক্রমণাত্মক। আমার প্রশ্ন তবে কি তা একটা অপরাধ? এদিন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ এনিয়ে মালভিয়ায় পুলিশি জুলুমের থেকে সুরক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেন। বিচারপতিরা শুনানিতে সোশাল মিডিয়া নিয়ে পর্যবেক্ষণে জানান, দেখা যাচ্ছে এতে অনেকে যা কিছু মন চায় তাই বলে দিচ্ছেন। এসব বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আছে।
এদিকে নির্বাচন আসায় বিহারে ছোট সংবাদ মাধ্যম কণ্ঠরোধে তৎপর হয়ে উঠেছে রাজ্যে শাসক দল বিজেপি। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা নাম সংশোধনে যে বেনিয়ম চালাচ্ছে তা নিয়ে ইউটিউবে তথ্য সহ সংবাদ পরিবেশন করে আসছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অজিত অনজাম। ভোটার তালিকায় নাম তুলতে নাগরিক পরিচিতির প্রমান হিসাবে নানা অবাস্তব নথির চাওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভূমিহীন খেতমজুর, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে তাদের জমির দলিল চাওয়া হচ্ছে। যা ভূমিহীন কৃষকদের তাদের কাছে কোনও দিন ছিল না। আধার কার্ড ভোটার কার্ড ছাড়া বাকি কোন নথি তাদের জোগার সম্ভব নয়। এনিয়ে নির্বচন কমিশনে নাম তোলার এই বেনিয়ম নিয়ে ছবি তুলে সংবাদ প্রকাশকরা হয় অনজামের ইউটিউবে। এই সংবাদ নিয়ে অস্বস্তি হওয়ায় শাসক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করায় সাংবাদিক অজিত অনজামের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে বেগুসরাই থানায় এফআই আর দায়ের করেছে পুলিশ। তাকে প্রেপ্তারের উদ্যোগ চলছে। এদিন বিবৃতিতে এঘটনার উল্লেখ করে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি ইউনিয়ন অব জানালিস্ট। ইউনিয়ন জানাচ্ছে, অনজামের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ইউনিয়ন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা প্রথম ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনে আধার কার্ডের মতো মূল নথি গ্রহণ করছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে কমিশনের নাম সংশোধনের অনিয়মের খবর প্রকাশ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। তাই সাংবাদিকদের কন্ঠরোধে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। এদিন জনবাদী লেখল সঙ্ঘ পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে বিশিষ্ট সাংবাদি অজিত অনজামের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের সাংবাদিকতা পেশার উপর আক্রমন বলে মনে করা হচ্ছে। যেসব সাংবাদিকরা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের নিশানা করেছে শাসক এভাবে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযান চলছে।
BJP Media
রাজ্যে রাজ্যে মতপ্রকাশ দমন করছে বিজেপি-আরএসএস

×
Comments :0