Ration West Bengal

চার বছরে রাজ্যে রেশনের বাইরে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ, বিজেপি চুপ

রাজ্য

চার বছরে রেশনের আওতা থেকে ছিটকে গেছেন রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৮৪ লক্ষ মানুষ। 
রাজ্যের খাদ্য দপ্তর সূত্রে মঙ্গলবার জানা গেছে, ২০২১-এর আগস্টে রাজ্যে রেশন কার্ড ছিল ১০ কোটি ৫০ লক্ষ ৭০ হাজার ৬৭৯জনের। এখন, প্রায় প্রায় চার বছর পর রাজ্যে রেশন কার্ডধারী মানুষের সংখ্যা হয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৩২। অর্থাৎ প্রায় চার বছরে রেশনের বাইরে চলে গেছেন রাজ্যের ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৪৭ জন।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারও রেশনের আওতা থেকে মানুষ কমাতে চায়। রাজ্যের তৃণমূল সরকারও সেই পথেই চলেছে। স্বভাবতই রাজ্যে প্রায় ২কোটি মানুষের কার্ড ছাঁটাই নিয়ে বিজেপি চুপ। যদিও এই তালিকায় সব ধর্মের মানুষই আছেন।
উদাহরণ হতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ২০২১-র আগস্টে এই জেলায় কার্ডধারী ছিলেন ৯৮লক্ষ ৪৮হাজার ৮৯৬টি। এখন দাঁড়িয়েছে ৮২লক্ষ ৭০ হাজার ৬১১। অর্থাৎ চার বছরে এই জেলায় কার্ড কমে গেছে প্রায় ১৬ লক্ষ। আর একটি উদাহরণ পুরুলিয়া। অনেক গরিব মানুষের বাস এই অনুর্বর জেলায়। এখানে প্রায় গত চার বছরে ৩৫লক্ষ ৮৫ হাজার থেকে কার্ডধারী মানুষের সংখ্যা নেমে এসেছে ২৯ লক্ষ ৫১ হাজারের কিছু বেশিতে। কমেছে প্রায় সাড়ে ৫লক্ষ। সংখ্যালঘু নিবিড় মুর্শিদাবাদে ২০২১-এর আগস্টে রেশন কার্ডধারী মানুষ ছিলেন ৯০লক্ষ ১২ হাজার ৩৫জন। এখন তা নেমে এসেছে ৭৭লক্ষ ২৫ হাজার ৭৯১-এ। অর্থাৎ এই জেলায় গত চার বছরে রেশনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৩ লক্ষের বেশি মানুষ। পাশের জেলা মালদহে কমেছে ১২ লক্ষের বেশি কার্ড। ছিল ৫৫লক্ষ ৯৭ হাজার ৩৩৩ জন কার্ডধারী। এখন রেশনের কার্ডধারী আছেন ৪৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬৪১জন। এমন ছবি প্রতিটি জেলার।
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের এক নেতার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে যে, কোনও ব্যক্তিকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। রাজ্য সরকারের লিখিত নির্দেশ আছে যে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যদি আটকে যায়, তাহলে আধার কার্ডের নম্বর মিলিয়ে রেশন দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। আধার কার্ডের নম্বর দিয়ে রেশন দেওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের আধার কার্ড নেই, বিশেষত পরিবারের শিশুদের, তাঁদের কার্ড ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। তা কয়েকদিন আগে শুরু হয়নি। গত চার বছর ধরেই চলছে।’’ তাঁর দাবি,‘‘মানুষ রেশন না পেয়ে আমাদের বলছেন। দোকানে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা রাজ্য সরকারকে অনেকবার বিষয়টি জানিয়েছি।’’
রাজ্য সরকার চুপ কারণ, রেশনে সরকারের ভরতুকির খরচ কমে যাচ্ছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার রেশনে কার্ড কমিয়ে খরচ কমাতে চাইছে।
রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের আর এক আধিকারিকের বক্তব্য অন্যরকম। তিনি বলেছেন,‘‘কিছু কার্ড ডুপ্লিকেটেড ছিল। বায়োমেট্রিক চালুর পর এক ব্যক্তির দুটি কার্ড রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেই কার্ডগুলি বাতিল হচ্ছে। লাগাতার তা চলছে। এছাড়া অনেকে মারা গেছেন।’’ সেই সংখ্যা কত? সেই আধিকারিকের দাবি,‘‘আমরা সমীক্ষা করেছিলাম। কিছু জায়গায় একই নামে দুটো কার্ড আছে। এমন ১৪ লক্ষ ডুপ্লিকেট আছে বলে আমাদের সমীক্ষায় উঠে এসেছিল ২০২০-তেই। সেই সময়েই এছাড়া ৫৪ লক্ষ মৃত মানুষের কার্ড ছিল। মোট ৬৮লক্ষ কার্ড হয় এই দুই মিলিয়ে। বর্তমানেও যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের কার্ড বাতিল হচ্ছে।’’ 
কিন্তু এই সময়ে অনেকে তো জন্মগ্রহণও করেছে। তাদের সংখ্যাও কম হবে না। তাহলে কার্ডের সংখ্যা লাগাতার কমছে কী করে?
মমতা ব্যানার্জির শাসন কালে সেই ৬৮লক্ষ কার্ড থাকলো কী করে, এই কার্ডগুলির সুবিধা কে ভোগ করেছে, তা থেকে কত টাকা কাটমানি আদায় হয়েছে— এই প্রশ্ন গুলি স্বাভাবিক। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪-১৫-র পর ‘পিডিএস অডিট’ হয়নি প্রায় ৭বছর। সেই সময়ে রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মমতা ব্যানার্জি সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে ডিজিটাল কার্ড চালু হয়। সেই কার্ডের গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটি পেরিয়ে গেছিল। কিন্তু ২০২০-র মাঝামাঝি থেকে আসে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। রাজ্যে এই নিয়ে প্রবল গড়িমসি চলে সরকারি পর্যায়ে। আধারের সঙ্গে রেশন কার্ড সংযুক্তিকরণের সময়সীমা রাজ্যে ৩ বার পেরিয়ে যায়। সেই পদ্ধতি চালুর পরে কার্ডের সংখ্যা কমে যায়, যা ২০১৩-র পরে আচমকা বেড়ে গেছিল মমতা-শাসনে।
কিন্তু তাতে সেই ‘ডুপ্লিকেট’ আর মৃতদের ৬৮লক্ষ কার্ড শুধু বাদ যায়নি। বাদ চলে গেছে প্রায় ১ কোটি ৩৮লক্ষ রেশন কার্ড। তাহলে এই প্রায় ৭০ লক্ষ কার্ড যেগুলি ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দেওয়া হয়েছে সেগুলি প্রকৃত, জীবিত মানুষের। সরকার তাঁদের ছিটকে দিয়েছে রেশনের সুবিধা থেকে।

Comments :0

Login to leave a comment