শারদীয়া ১৪৩১
অন্যকথা
শারদোৎসব - কিছু কথা, কিছু অনুভব
পল্লব মুখোপাধ্যায়
মুক্তধারা
দুই
যা আরও বেশি করে প্রকট হয়ে ওঠে উনিশ শতকে। দেশের সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার
বাণীতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতেও হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল এই উৎসব । সর্বজনীন
উৎসবগুলিতে জুড়ে গিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, হেম মুখোপাধ্যায়ের মতো
স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্বদেশী কর্মী এবং সমাজসংস্কারকরা। আর তাঁদের সঙ্গেই
শারদোৎসবের সঙ্গে জুড়ে গেলেন সংখ্যালঘুরাও । অচিরেই বাংলার শারদোৎসব হয়ে
উঠল সর্ব ধর্মের মিলন ক্ষেত্র। যে ধারা সময়ের সঙ্গে বহমান আজও।
তবে একথাও ঠিক, নিরংকুশ শারদোৎসব আর কবেই বা দেখা গিয়েছে | কখনও
বিলম্বিত, বেয়াড়া বর্ষা ভাসিয়া দেয় | এবছরও রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা উৎসবমগ্ন
নয়, থাকবে জলমগ্ন | অসুখ ছড়াবে, ছড়াবে দুর্দশা | উৎসবের আলো পৌঁছতে পারে না
বহু ঘরে | বন্ধ কারখানা বন্ধ করে রাখে এমনকি বচ্ছরকার দিনগুলিতে উৎসব-
উপভোগেরও দরজা | আলো-ঝলমলে দিনে-রাতে আমরা কি খোঁজ নিই কার ঘরে জ্বলেনি
দীপ, কে আছে আঁধারে, কার বাছার জোটেনি দুধ,আছে অনাহারে |
শারদোৎসব এখন বাঙালির জাতীয় উৎসবের চেহারা নিয়েছে | ধর্মীয় বাতাবরণ ছিন্ন
করে এই উৎসব এখন কার্যত মিলনের উৎসব | এই মিলন উৎসব ধর্মনিরেপেক্ষ ও
গণতান্ত্রিক জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব | রাজ্যের মানুষ জাতি-
ধৰ্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে এই উৎসবে মেতে ওঠেন | আদতে শারদোৎসব রাজ্যের
ধর্মনিরেপেক্ষ, সমন্বয়ী ঐতিহ্যকেই তুলে ধরে | শরৎকালে ফসল কাটার সময়ে
আকাশে বাতাসে যখন আনন্দের সুর ধ্বনিত হয় তখন শারদোৎসবের আনন্দই আলাদা।
তবুও তো উৎসবে আলো থাকে না অনেকের ঘরে। সেই তমসা ও মালিন্য দূর করতে
পারলেই শারোদৎসবের সাফল্য ও সার্থকতা।
সমাপ্ত
Comments :0