শারদীয়া ১৪৩১
গল্প
আমি মরি নি
অমর বন্দ্যোপাধ্যায়
মুক্তধারা
প্রথম মেয়েটি বললো, আমি তোমাকে ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। আমি মৃত।
হতচকিত দ্বিতীয়জন। ভয়ে ওর দিকে তাকালো। মৃত? বিস্মিত সে।
তৃতীয়জন অবিচলিত, নিরাসক্ত এবং ভাবলেশহীন। সে জিজ্ঞাসা করলো, কী ভাবে মারা গেলে তুমি?
প্রথমজন বললো, ধান ক্ষেতের মাঝ বরাবর পাকা রাস্তা ঢুকে গেছে আমাদের গ্রামে। নামটা হয়তো তোমরা শুনে থাকবে, কামদুনি। গ্রামে ঢোকার মুখে মাঠ ও পুজো মণ্ডপ, তার পাশ দিয়ে কিছুটা হাঁটলে আমাদের কাঁচা ঘর। কলেজ থেকে ফিরছিলাম। আমি প্রায় রাস্তা শেষ করে এনেছি। জোরে জোরে হাঁটছিলাম কারণ সূর্য ডুবছে আর আঁধার নামছে। হঠাৎ কয়েকটা ছায়া মূর্তি পাকুর গাছের পাশ থেকে উঁকি দিল। আমি একজনকে চিনতে পারলাম,সাজ্জাত ভাই। কিছু বলবার আগেই ওরা আমার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে দিল। আমার ছিল কোমর ছাপানো চুল। সেই চুলের গোছা ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে পোড়ো বাড়ির আমবাগানে নিয়ে গেল ওরা, চারজন। পাড়ার ছেলে, পঞ্চায়েত মেম্বার। ওরা যা বলে, তাই আইন। একজন বলল ছিঁড়ে ফ্যাল সালোয়ার কামিজ। আরেকজন ফিস ফিস করে বলল মারিস না। আমার চেনা। ছোটবেলায় একসাথে খেলেছি। তারপর আমাকে ঠেসে ধরে রাখলো দুজন। আমি অবশ হয়ে পড়ে লাগলাম।
তৃতীয়জন বললো,আর কাব্যি করে বলতে হবে না তোমাকে। যা করার তো করলো কিন্তু মারল!
চিনে ফেলি যে এবং হাত দিয়ে গামছার বাঁধন খুলে চিৎকার করে বলি - ছাড়বো না তোদের, জানোয়ার! সবচেয়ে যে খুব পরিচিত সেই মামুন বললো, পেঁড়ে ফ্যাল ওকে, মেরে দে। আমি দুহাত জোর করে বললাম, মেরো না, মেরো না আমাকে…
তৃতীয়জন বললো, তারপর মারা গেলে?
না। মরি নি তো!
তাহলে !
এই যে আমি মৃতদেহ নিয়ে এসেছি।
নিজের মৃতদেহ নিজে বহন করছো?
কী করবো বোন? আমার যে বিচার হয় নি।
দ্বিতীয়জন বললো, ঠিক আমার মতো!
প্রথমজন বললো,তুমিও মৃত?
না, আমি মরিনি।
তাহলে!
বিচারের আশায় নিজের ডেডবডি নিয়ে ঘাড়ে করে বহে চলেছি, বোন।
কিন্তু কী হয়েছিল?
ক্রমশ
Comments :0