SHARADIYA 1431 \ STORY \ AMI MARINI - AMAR BANDAPADHYA \ MUKTADHARA \ 12 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১ \ গল্প \ আমি মরি নি - অমর বন্দ্যোপাধ্যায় \ মুক্তধারা \ ১২ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

SHARADIYA 1431  STORY  AMI MARINI - AMAR BANDAPADHYA  MUKTADHARA  12 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১  

গল্প 

আমি মরি নি

অমর বন্দ্যোপাধ্যায়

মুক্তধারা

 

(গত সংখ্যার পর)

তাহলে!

বিচারের আশায় নিজের ডেডবডি নিয়ে ঘাড়ে করে বহে চলেছি, বোন।

কিন্তু কী হয়েছিল?

ঘরে একা থাকতাম। ছেলে আর বাপ গিয়েছে ভিনদেশে কাজে। মেম্বরদাদা এসে রোজই ফুসলাতো, বলতো কানি, তু চল। সোয়াগে থাকবি, খাওয়া, টাকা পয়সা পাবি। ভয়ে আমার গা সিঁটিয়ে উঠত, বলি কুনজর দাও ক্যানে দাদা। শোনলো নাই। একদিন জোরজবরদস্তি কইরে তিনচারজনকে লিয়ে দরমার আর্গল ভাইঙে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা। ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেললে আমারি। উরি বাপ… যেন কতগুলো হায়েনা।

তারপর …. মারা গেলে!

না, মরিনি। এই যে মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে চলেছি।

তৃতীয় জন নিস্পৃহ কিন্তু চোয়াল শক্ত করে বললো, আমি চেয়েছিলাম দুর্নীতির চাইদের মুখোশ খুলে দিতে। দিন রাত জেগে ডিউটি দিয়েছি। প্রতিদিন শয়ে শয়ে রোগী, তারপর নিজের প্রজেক্টের কাজ তবু টাকা দিতে হবে, নাহলে পাশ করাবে না। ডেড বডি মর্গ থেকে পাচার হবে, ওষুধ বাইরে বেরিয়ে যাবে,রাতের বেলায় হাসপাতালে মদ মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবে, ড্রাগ বিক্রি হবে আর কিছু ক্ষমতাবান টাকার পাহাড় তৈরি করবে। আমি বাঁধা দিয়েছিলাম তাই ওরা কয়েকজন মিলে আমাকে ….

মেরে ফেললো?

ওরা জানে মানুষকে এভাবেই খুন করতে হয়। কিন্তু না, আমি মরি নি। আমাকে জোর করে মা-বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। সব প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে কিন্তু আমি মরি নি।

তাহলে …
আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। শুধু হাসপাতালে নয়, এখন আমার যাতায়াত সর্বত্র। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে - সর্বত্র আমাকে পাবে। তবে তোমাদের মতো ডেডবডি বহন করতে হচ্ছে না আমাকে।

তাহলে !

আমি বাতাসে আছি। সূর্যের আলোয় আছি। তারায় তারায় আমার অজস্র চোখ জেগে আছে।
ওই যে মানুষ, ছেলেমেয়েরা,মা বাবারা,প্রপিতামহরা,অসংখ্য গাছপালা, পশুপাখি, সমুদ্র,পাহাড়,আকাশ - সবকিছুর মাঝে আমি আছি।

কী ভাবে?

যেহেতু আমাকে নিয়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করছে মাথা না - নোয়ানো অসংখ্য মানুষ। জয়ের পতাকা উড়ছে গাঁয়ে গাঁয়ে, খেয়া ঘাটে, ডিঙি, নৌকাতে, নদীর জোয়ারে।  শত হামলা, মামলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষের লড়াই চলছে। মরতে পারি আমরা?
প্রথমজন, কামদুনির মেয়েটি বললো - আমাকে কেনা যায় না। পটাসপুরের বউটি বললো আমাকেও। তৃতীয়জন বললো আমি ডাক্তার। আমি চুপি চুপি মা-কে বলে এসেছি মা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রকৃত শহীদ তো তুমি। শহীদের যেমন কোনো ঘর নেই, তোমারও নেই। তোমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তুমি কখনও বাপের বাড়ি, কখনও শ্বশুর বাড়ি,কখনও স্বামীর বাড়ি থাকো। এ সব তো পুরুষের স্থায়ী ঠিকানা, তোমার ঠিকানা কই? আমি সেই স্থায়ী ঠিকানা চাই। আমি মরি নি। আমি মরি না কখনও। 

সমাপ্ত

Comments :0

Login to leave a comment