Basirhat

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরানে আটকে বসিরহাটের যুবক, উদ্বেগে পরিবার

রাজ্য জেলা

উৎকণ্ঠায় পরিবার

প্রবীর দাস- বসিরহাট
পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যে কার্যত যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। ট্রাম্পের উস্কানিমূলক বক্তব্যে ইজরায়েলী বাড়বাড়ন্তে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। যুদ্ধে ইরান ইজরায়েল। চলছে সমানে সমানে টক্কর। হামলা পাল্টা হামলায় বিধ্বস্ত ইরান এবং ইজরায়েল। এমনি এক যুদ্ধ পরিস্থিতির আঁচ এসে পড়লো বসিরহাটে। সরকারি বিভিন্ন সূত্রে খবর এই মূহুর্তে কমবেশি দশ হাজার ভারতীয় নাগরিক ইরানে রয়েছেন। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দুই শতাধিক মানুষ সেখানে। ফলে উৎকণ্ঠা উদ্বেগ বাড়ছে বৈ কমছে না। ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইরানে আটকে পড়া ভারতীয় তথা এই রাজ্যের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তাকে আরও গতিশীল করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যারা তাদের মধ্যে বসিরহাটের শাঁকচূড়ার বাসিন্দা গোলাম আসকারি। তারই ছোট ভাই বছর ২৭’র সৈয়দ বাকির মাজলিসি রেজবি পার্সিয়ান ভাষায় পি এইচ ডি করতে ২০১৮সালে যান ইরানের কোম শহরে। আর ছয়মাস গেলে সে ডক্টরেট উপাধি নিয়ে বাড়ি ফিরবে। এমতবস্থায় যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ঘুম উবেছে গোটা পরিবারের। প্রতিবেশীরাও চিন্তিত তাদের গ্রামের ছেলে বাকিরকে নিয়ে। বুধবার সকালে বাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাবা মা দাদা বাকির সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আত্মীয় স্বজন সহ গভীর উদ্বেগে গোটা রেজবি পরিবার। টিভির পর্দায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে প্রতি মূহুর্তে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। যতক্ষণ না বাকির বাড়ি ফিরছে ততক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি কি করে। এদিন সংবাদমাধ্যমের করা প্রশ্নের উত্তরে এমনই জানালেন দাদা গোলাম আসকারি। একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, গরমের ছুটি পড়লে বাকির বাড়ি চলে আসতো। কয়েক মাস থেকে আবার ফিরে যেত। শেষ ৮ মাস আগে সে বাড়িতে এসেছিল। ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয় যুদ্ধের পরিস্থিতি। পরিবারের সঙ্গে এখন এক প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাঁর ইন্টারনেট থাকলে কখনও কথা হচ্ছে আবার কখনো হচ্ছে না। সেই ভাবে যোগাযোগও রাখতে পারছেন না পরিবারের মানুষ। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে। আমরা আতঙ্কে আছি। ইন্টারনেট যদি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না তার সাথে।  সামাজিক মাধ্যমে বিধায়কের মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আর্জি জানিয়েছেন তিনি। পড়াশুনায় ছোট থেকেই মেধাবি সৈয়দ বাকির। স্নাতক শেষ করে পার্সিয়ান ভাষায় ডক্টরেট করতে যান ইরানের আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। যেটি ইরানের কোম শহরে  অবস্থিত। এই মূহূর্তে ইরান এবং ইজরায়েলের যুদ্ধে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ইরানে মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যা হওয়ায় বাড়ির সঙ্গে ঠিকমতন যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। বাড়ির থেকে ফোন করেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।


সৈয়দের দাদা গোলাম আসকারী বলেন, ওর টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল। ২০ জুন বাড়ি আসার কথা। কিন্তু বিমান পরিষেবা বন্ধ। ইরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের লোকজন ওদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। আমার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে দুদিন আগে কথা হয়েছে। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি,  যত তাড়াতাড়ি হোক আমাদের রাজ্য সরকার  এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশমন্ত্রক অতি দ্রুত তৎপরতার সাথে আমার ভাই সহ ইরানে আটকে পড়া প্রত্যেক ভারতীয়কে বাড়ি  ফেরার ব্যবস্থা করুক। কারণ যতদিন যাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা টেলিভিশনে তেমনি দেখছি। তাই একটা ভয় কাজ করছে মনে যতক্ষণ না সে বাড়ি ফিরছে। একটা আতঙ্কের মধ্যে আমরা রয়েছি। সৈয়দ বাকিরের মা বললেন, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমার ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সামাজিক মাধ্যমে সৈয়দের পোস্ট দেখে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি ব্যানার্জি বলেন, আমি বিষয়টা জানা মাত্রই মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছি। ওখান থেকে একজন সাংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আমরা ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সাহায্য করার চেষ্টা করবে।

Comments :0

Login to leave a comment