Deucha Panchami

খনি নয় দুর্নীতি, দেউচা পাঁচামি কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে বিশাল মিছিল বোলপুরে

রাজ্য জেলা

বোলপুরে মিছিলে মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃবৃন্দ।

রণদীপ মিত্র: বোলপুর

দেউচা পাঁচামিতে কয়লা খনির নামে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে বোলপুরে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে সুবিশাল মিছিল হয়েছে। 
মিছিলের পর সংবাদমাধ্যমে মোঃ সেলিম বলেছেন ডেউচা পাঁচামি খনি নয় আসলে একটা বিশাল মাপের দুর্নীতি। রাজ্য সরকারি সংস্থা ডব্লিউ বিপিডিসিএল’র টেন্ডারের শর্ত ভাঙা হয়েছে। যে সংস্থা ব্যাসল্ট ছড়ানোর টেন্ডার পেয়েছিল সে আরেকটি সংস্থাকে দায়িত্ব হাত বদল করেছে। শর্ত অনুযায়ী এই কাজ করা যায় না। সেই সংস্থাকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ ও দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সংস্থার খুনি সংক্রান্ত কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসায়িক লেনদেন কি তা একেবারেই অস্বচ্ছ। এইরকম ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি তৃণমূলের অভিষেক ব্যানার্জির লিভস এন্ড বাউন্স সংস্থার ক্ষেত্রে। 
সেলিম বলেন এই দুর্নীতির সঙ্গে কেন্দ্রের সরকারও যুক্ত। পরিবেশ বিধি সংক্রান্ত ছাড়পত্র নেওয়ার দায় এড়ানোর জন্য মাত্র ১২ একরে কাজ হবে বলে জানানো হয়েছে। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক লক্ষ কাজ হওয়ার ঘোষণা করছেন কি করে। মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। কোনও প্রকল্পের কাজ ধাপে ধাপে হলেও পুরো প্রকল্পের জন্যই ছাড়পত্র জোগাড় করতে হয়। কেন্দ্রে সরকারও এই বেআইনি কাজকর্ম আটকাচ্ছে না। 
সেলিম সরাসরি অভিযোগ বলেছেন যে তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জির যোগসাজশে এই দুর্নীতি। 
এর আগে সিপিআইএম রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিশদে ডেউচাপাচামী খনি প্রকল্পের নামে বিশাল দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ এবং নথি পেশ করেছিলেন সেলিম। এদিন তিনি জানিয়েছেন এই বিপুল দুর্নীতি এবং বহু মানুষকে বাস্তবচ্যুত করার এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। তিনি বলেছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার,  জেলাশাসক এরাও এই বেআইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত। তাঁরাও ছাড় পাবেন না। পুলিশের মধ্যেই এই দুর্নীতি চলছে।

উল্লেখ্য ২০২৩-এর নভেম্বর মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভা বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী WBPDCL-কে বেসরকারি সংস্থা বাছাই করে দেউচা-পাঁচামিতে ৪৩১.৪৭ একর জমিতে ব্যাসল্ট খনন করে সেটা বাজারে বিক্রি করার অনুমতি দেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি সংস্থার মাধ্যমে ব্যাসল্ট খনন বিক্রি করার অনুমতি প্রদানের কোন যুক্তিপূর্ণ ভিত্তি নেই। ২০২৪-এর মার্চ মাসে WBPDCL-এর মাধ্যমে ব্যাসল্ট খননের জন্য খনি নির্মাণ ও পরিচালনা করার বেসরকারি সংস্থা (MDO) Trancemarine and Confreight Logistics Private Limited-কে বাছাই করার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গরমিল। ২০২৪-এর অক্টোবর মাসে দেউচা-পাঁচামিতে ১২ একর জমিতে ব্যাসল্ট খনি প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়, তাতে ব্যাসল্ট খনির আয়তন ইচ্ছাকৃত ভাবে কম করে দেখানো হয়।
গত ৩ জুলাই কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘মমতা বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ঘোষণা করলো এই প্রকল্পের। যা বলেছে সব মিথ্যে। এই কয়লা খনির বরাদ পেয়েছে wbpdcl কে প্ল্যান জমা দিতে হবে ২১ মাসের মধ্যে। আজ পর্যন্ত তা হয়নি। wbpdcl হাইকোর্টে যা বলেছে তাতে স্পষ্ট হচ্ছে কতটা দুর্নীতি আছে। পরিবেশের সমীক্ষা ছাড়পত্র দরকার প্রকল্পের জন্য। সেখানেও দুর্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ১২ একর দিয়ে শুরু হবে তারপর ধীরে ধীরে তার ৪৪১ একর হবে। আইন অনুযায়ী ৫০ একরের বেশি হলে সেন্ট্রাল এজেন্সি দিয়ে করতে হবে সমীক্ষা। টেন্ডার যা ডাকা হয়েছে সেখানেও সমস্যা। দর দেওয়া নেই সেখানে। যাদের দেওয়া হলো তারা লজিস্টিকস এর কাজ করে। এদের কোন অভিজ্ঞতা নেই এই বিষয়। তাহলে তাদের কেন দেওয়া হলো?’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘কয়লা নয় আসল লক্ষ্য পাথর। ২০২৪-এর মার্চ মাসে WBPDCL-এর মাধ্যমে ব্যাসল্ট খননের জন্য খনি নির্মাণ ও পরিচালনা করার বেসরকারি সংস্থা (MDO) Trancemarine and Confreight Logistics Private Limited-কে বাছাই করার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গরমিল। ২০২৪-এর অক্টোবর মাসে দেউচা-পাঁচামিতে ১২ একর জমিতে ব্যাসল্ট খনি প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়, তাতে ব্যাসল্ট খনির আয়তন ইচ্ছাকৃত ভাবে কম করে দেখানো হয়। ২০২৫-এর ৫ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কয়লা খনি প্রকল্প শুরু করার ঘোষণাটি ছিল সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, কারণ আজ পর্যন্ত কয়লা খননের জন্য খনির লিজ বা মাইনিং প্ল্যান কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকে জমা করা হয়নি। ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দেউচা-পাঁচামিতে আসলে যা শুরু হয়েছে তা একটি স্বতন্ত্র ব্যাসল্ট খনি প্রকল্প, যেখানে MDO বাছাই করার এবং প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল অনিয়মে ভরা।’’
তিনি বলেন, ‘‘২০২৫-এর এপ্রিল মাসে Trancemarine Confreight Logistics Private Limited কোম্পানিকে যেভাবে Himadri Speciality Chemical Ltd নামক বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থা অধিগ্রহণ করেছে তা WBPDCL-এর টেন্ডারের শর্তাবলি উল্লঙ্ঘন করেছে। Himadri মাত্র ৪.২৩ কোটি নগদ ও ১৫০ কোটি ঋণ দেওয়ার বিনময়ে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা মুনাফার প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘কয়লা খনির জন্য কোন টেন্ডার জমা পড়েনি। এপ্রিল পর্যন্ত এই আগ্রহ দেখায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা আসলে মিথ্যে। টেন্ডার কাগজে লেখা আছে প্রকল্প চলাকাইন মালিকানা বদলানো যাবে না। কিন্তু দেখা গেলো যে টেন্ডার পেলো তাকে হিমাদ্রী খেমিকাল কোন নিলো?’’

Comments :0

Login to leave a comment