Panchayat vote 2023

বিকালেই বিক্ষোভ বামফ্রন্টের ধিক্কার কমিশনার, মুখ্যমন্ত্রীকে

কলকাতা

নির্বাচনে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে দায়ী করে শনিবার বিকালেই কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখালো বামফ্রন্ট। কমিশন এবং রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানিয়ে বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে ভোটার ও ভোটকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। প্রতিটি মৃত্যুর জন্য তাঁরাই দায়ী।
বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু দাবি জানিয়েছেন, যেখানে যেখানে ভোট লুট হয়েছে, ব্যালট পেপার ও বাক্স তছনছ করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে, সেই সব জায়গায় পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে হবে, যাতে ১১ জুলাই ভোট গণনায় তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বিক্ষোভে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘এত মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন? যে দলেরই হোক, আমরা সবার মৃত্যুতেই শোকাহত। কিন্তু তৃণমূলের এত কর্মীর মৃত্যুতেও মুখ্যমন্ত্রী চুপ! তৃণমূলীরা এর থেকে যা বোঝার এখনই বুঝে নিন। যাদের ভোট লুট করতে পাঠিয়েছিলেন, তাদের মৃত্যুতেও মুখ্যমন্ত্রী শোক প্রকাশ করতে পারছেন না।’’
সকাল থেকে দুপুর, লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা মৃত্যুর সংখ্যা দেখে রাজ্যবাসী যখন উদ্বিগ্ন, তখনই বামফ্রন্ট তাৎক্ষণিকভাবে কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভের কর্মসূচি নেয়। বিকাল সাড়ে চারটেয় সিপিআই(এম)’র কলকাতা জেলা কমিটির দপ্তর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সামনে থেকে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে গিয়ে ধিক্কার জানিয়ে স্লোগানে সোচ্চার হন। ‘কেন এত মৃত্যু, মমতা ব্যানার্জি জবাব দাও’, ‘রাজীব সিনহা নিপাত যাও’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কমিশনের গেটের সামনে বামফ্রন্টের বিক্ষোভ। বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্য মিশ্র, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ও সুজন চক্রবর্তী, পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক তপন হোড় সহ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ মিছিল ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। নির্বাচনে যত জন প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সবার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা সরোজিনী নাইডু সরণির উপরে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
এদিন বিমান বসু বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েও বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের বাধা এবং রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করে গ্রামবাংলার জনগণ যেভাবে উৎসাহ সহকারে প্রতিবাদী মেজাজে ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছেন, তার জন্য তাঁদের বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। সাধারণ মানুষ, এমনকী মা-বোনরাও ভোটাধিকার রক্ষার দাবিতে অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন। নির্বাচনী পর্বের শুরু থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার লক্ষ্যে যে হামলা ও আক্রমণ সংগঠিত করেছে, তার মোকাবিলা করে গ্রামের মানুষ নিজেদের জীবন বাজি রেখে যেভাবে ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছেন, তা অভিনন্দনযোগ্য।’’ 
রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে বিমান বসু বলেছেন, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি কেন? মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তো পুলিশ প্রশাসনেরই করে দেওয়ার কথা। কমিশনার আগে তো মুখ্যসচিব ছিলেন, উনি জানেন না যে, নির্বাচনের সময়ে পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের হাতে পরিচালিত হয়? এতই অকর্মণ্য কমিশনার যে, এখন দায় এড়াচ্ছেন। 
বিক্ষোভে সুজন চক্রবর্তী, নরেন চ্যাটার্জি, তপন হোড়, স্বপন ব্যানার্জি, কল্লোল মজুমদারও ভাষণ দেন। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, এমন অপদার্থ ব্যক্তিকে রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে এবং রাজ্যপাল তাঁকে নিয়োগ করেছেন যে, গ্রামের মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর হামলার মোকাবিলা করতে হয়েছে। পুলিশ সাহায্য না করলে তৃণমূলের ভোট লুট করার ক্ষমতা হতো না।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment