PANCHAYAT ELECTION

সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের অনীহা কেন? প্রশ্ন হাইকোর্টের

কলকাতা

 রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এত অনীহা কেন? দোরগোড়ায় নির্বাচন। অথচ এখনও বাহিনী মোতায়েন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, কোন পথে বাহিনী কোথায় যাবে তার স্পষ্ট রুপরেখা কমিশন তৈরি করেনি। একাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে আন্তরিকভাবে একশো শতাংশ সহযোগিতা করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। বুধবার পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলার শুনানির পর্যবেক্ষণে একথা বলেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিসন বেঞ্চ। এদিন বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম তাঁর পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এমন কিছু করুক যাতে মানুষের মনে আস্থা এবং ভরসা ফেরে। নির্বাচন পরিচালনায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজে যাতে মানুষ সন্তুষ্ট হন এমন পদক্ষেপই নিতে হবে। তা না হলে মামলার পর মামলা হবে।


    আগেই ডিভিসন বেঞ্চ তার নির্দেশে অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। মনোনয়ন পর্ব জমা দেওয়ার পর্ব থেকেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, প্রত্যাহার এবং স্ক্রুটিনির বহু অভিযোগ নিয়ে আদালতে মামলার শুনানি চলছে। বুধবার এই বিশৃঙ্খলার কথা তুলে আদালত বলেছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এমন কাজ করতে হবে যাতে মানুষ নিশ্চিন্ত হয়ে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। 
    এদিন শুনানির সময় রাজ্য নির্বাচনের কমিশনের পক্ষের আইনজীবী আদালতের পরামর্শমতই নির্বাচন পরিচালনা হবে বলে জানান। তবে নির্বাচনের দফা বাড়ানোর কথা তিনি বলেননি। রাজ্যে যে ৩৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে তাদের কীভাবে ব্যবহার করা হবে সেকথাও বলেননি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ জুলাই একদিনে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছে। গত ১২ জুন নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র আদালতকে জানিয়েছিলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন একদিন বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন চিন্তা ভাবনা করছে। সেদিন কমিশনের তরফে দু’দফায় নির্বাচন করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এপ্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কোনও কথা আদালতে বলেননি। ফলে নির্বাচন এক দফাতেই হচ্ছে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে। 


   এদিকে, আদালতের নির্দেশেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এই কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার চিঠি পাঠানো নিয়েই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল। এখনও ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে আসেনি। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী আদালতে বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রেল দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করছে। যাতে এরাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা আসতে পারেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যে যে বাহিনী রয়েছে, তাদের কীভাবে ব্যবহার করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই প্রশ্নের উত্তর রাজ্য নির্বাচন কমিশন পাঠায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ন্যূনতম থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার উদ্যোগও কমিশনের নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনী কোন পথ দিয়ে কোথায় যাবে, তার কোন পরিকল্পনা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে করা হয়নি। এই অবস্থায় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। 


   মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব শুরু হতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্লিপ্ত থেকেছে। মনোনয়ন জমা থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত হিংসার নির্বাচন হচ্ছে। জোর করে যেমন বহু প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি তেমনই ২০ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত ২০ হাজার ৫৮৫টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। আদালতে কংগ্রসের আইনজীবী বলেছেন, শাসক দল বিরোধীশূন্য রেখে নির্বাচন চায়। ফলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোনও নালিশ গ্রহণ করছে না। এই নির্বাচনে আদালত তার নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়োগ করুক। আদালতের পর্যবেক্ষক থাকলে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা অনেক কম হবে। তিনদিনে যেখানে প্রায় ২১ হাজার প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। স্ক্রুটিনির সময় বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র বিকৃত করা এবং বাতিল করার অভিযোগেও মামলা হয়েছে। 
  এই শুনানির সময়ই বিচারপতি শিবজ্ঞানম মনোনয়ন প্রত্যাহারের একটি জনস্বার্থের মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিং ১ব্লকে ২৫০ জনের বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে। এক ব্যক্তি এনিয়ে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, এত প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার কেন হলো তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাছাড়া তিনি বলেছেন, এই মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফলে আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো না। নির্বাচনে আমার কোনও অধিকারই থাকবে না। বিচারপতি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে হলফনামা জমা দেবেন সেখানে নিশ্চয়ই এই বিষয়টির ব্যাখ্যা থাকবে। বুধবার কমিশনের জমা দেওয়া হলফনামা দেখে আদালত সন্তুষ্ট হয়নি। আদালত এদিন বারে বারে কমিশনকে বলেছে, এমন কিছু করুন যাতে মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। কমিশন ব্যবস্থা না নিলে আদালতে আরও মামলা দায়ের হবে। একথাও কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত।
 

Comments :0

Login to leave a comment