PANCHAYAT ELECTION

সাহসী লড়াইয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন তিস্তা পারের মানুষ

জেলা

চোরেদের রাজত্বে ভালো নেই তিস্তা পারের মানুষ। আর তাই পঞ্চায়েতে সন্ত্রাস দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে লাল পতাকাকে সঙ্গে নিয়েই গ্রামবাসীরা প্রচারে নেমেছেন বিবেকানন্দ পল্লী, সুকান্ত নগর, সারদা পল্লীর তিস্তা পারের ১০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রাম গুলিতে। পাড়ায় পাড়ায় সিপিআই (এম) সহ বামফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রচারে সাধারণ মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কথাই উঠে আসছে বারবার। পানীয় জল থেকে রাস্তাঘাটের অব্যবস্থা, আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা নিয়ে চরম বেনিয়ম আর লুটপাটের কথা বলছেন তারা।

 

২০১৮ সালের নির্বাচনে সন্ত্রাস কায়েম করে জলপাইগুড়ি শহর ঘেঁষা সদর ব্লকের তিস্তা পাড়ের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ টি পঞ্চায়েতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ভয় হুমকি আর সন্ত্রাস নামিয়ে এনে গতবার মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। আর এবার সব কয়টি আসনেই ভয় সন্ত্রাসকে প্রতিরোধ করে মনোনয়ন জমা করেছে লাল ঝাণ্ডার প্রার্থীরা।
লাগাতার সাহসী লড়াইয়ে তিস্তা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তিস্তা পাড়ের এই গ্রামগুলিতে তৃণমূলের সন্ত্রাস দুর্নীতি আর বিজেপির ভেদাভেদের রাজনীতির ছবি ধরা পড়েছে প্রতি পদক্ষেপে। হুমকি সন্ত্রাসের আবহ কায়েম করে রেখেছিল তিস্তা তীরবর্তী এই গ্রাম গুলিতে। সিপিআই(এম) কর্মী ললিত দাসের দোকান পোড়ানো হয়েছিল।  সেদিনের মার খাওয়া সেই সব প্রতিবাদীরা এবার শাসক দলকে হারাতে গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন।
পাঁচ বছর ধরে ভোটারদের বিভ্রান্ত করে চলছে তৃণমূল ও বিজেপি। প্রচার ও বৈঠকি সভার আলোচনায় তাই উঠে আসছে। পরিষেবা তলানিতে। বরাদ্দ লুট হওয়ার অভিযোগ উঠে আসছে। প্রতারিত মানুষ দুই ফুলের শিবির থেকে বেরিয়ে অংশ নিচ্ছেন বামপন্থীদের প্রচারে।


একদিকে তিস্তা আর অন্যদিকে করলা নদী। মাঝখানে সরু গ্রাম্য এলাকা সারদা পল্লী। সারা বছর করলা নদী পার করে জলপাইগুড়ি শহরে কর্মস্থলে যেতে হয় এলাকার মানুষকে। কয়েকশ ছাত্রছাত্রী শহরের বিভিন্ন স্কুলে যাতায়াত করে এই নদী পার করেই। বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদ গন্ডার মোড়ে পাকা সেতু নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল। বরাদ্দ হয়েছিল টাকাও। সেই টাকার হদিশ নেই।  বিগত কয়েক বছর বর্ষার সময় বাঁশের সাঁকো তৈরির নূন্যতম ব্যবস্থাও করেনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত। বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড প্রতি বছর বর্ষায় বাঁশের সাঁকো তৈরি এবং পারাপারের জন্য ঘাটে দিন রাত নৌকার ব্যাবস্থা রাখতো। গত কয়েক বছরে তৃণমূল আমলে সেই সবের আর কোনো বালাই নেই।
প্রতিবছর তিস্তার চড়ে বিভিন্ন সময় মরসুমি ফসল শসা,লঙ্কা টমেটো,উচ্ছে,পটল, বাঁধাকপি,বাদাম,আলু সহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয় উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন সময় নিম্নচাপ সহ বিভিন্ন কারণে আকাল বর্ষনে নদীর জল বেরে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই চাষ মাথায় হাত পরে তিস্তা পারের চাষীদের। নিজস্ব জমি না থাকায় এই চাষীরা কোনরকম সরকারের ক্ষতিপূরণ পান না বাম জমানায় কৃষি ঋণসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকলে এখন লাল ফিতার বাঁধনে সেদিকে দেখতে চান না চাষীরা। বরঞ্চ চড়া মহাজনি সুদে ঋণ নিয়ে ফসল করে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়লে ধনেপ্রানে মারা পরেন তারা। তিস্তা পারের গ্রাম গুলিতে অধিকাংশ বাসিন্দারী নদীর চড়ায় চাষ করে জীবন কাটে।
বাম প্রার্থী ললিত দাস বলেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থ হয়েছেন জন পরিষেবা ও গ্রামীণ প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে। বিজেপি সম্প্রদায়ের নামে বিভ্রান্ত করছে মানুষ কে।
প্রতিদিনই তিস্তা নদীর পাড়ে কোন না কোন এলাকায় লাল ঝান্ডার মিছিল হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বৈঠকি সভা। সভা গুলিতে তৃণমূলকে সরিয়ে গরীব মানুষের পঞ্চায়েত গঠনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। সিপিআই(এম) সদর দক্ষিণ-পূর্ব এরিয়া কমিটির সদস্য সুভাষ রায়ের বক্তব্য গ্রামের মেহনতী খেটে খাওয়া মানুষ তাদের প্রতিনিধিকেই জিতিয়ে আনবেন। এটাই হবে শ্রেণীর লড়াই। ২০১৮ সালে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। লুটের ভোটের পঞ্চায়েত ছিল। এবার সব এলাকায় প্রার্থী রয়েছে আমাদের। লড়াই যখন সামনা সামনি তখন পিছিয়ে থাকার উপায় নেই। এখানে ভোট লুট করতে গেলে সমুচিত জবাব পাবে তৃণমূলীরা।
বিকেলের পর থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা। সুকান্তনগর এলাকার সব্জি বিক্রেতা নগেন সরকার অভিযোগ করেন কাজের সময় তৃণমূল বিজেপিকে এলাকায় পাওয়া যায় না। মহামারী থেকে শুরু করে এলাকার রাস্তাঘাট নিয়ে অঞ্চলে ডেপুটেশন, ন্যায্য ফসলের দামের জন্য লড়াইয়ে সবেতেই এলাকার মানুষ পাশে পেয়েছেন বামপন্থীদের। তাই এবার তাদেরই জয়যুক্ত করতে হবে। বিবেকানন্দ পল্লী এলাকার মানুষের বক্তব্য বামফ্রন্ট প্রার্থীরা এবার তৃণমূলকে ভালই বেগ দেবে।

রবিবার সন্ধ্যায় ছিল বৈঠকি সভায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় সিপিআইএম মনোনীত প্রার্থী আলপনা বেপারী বলেন, বামফ্রন্ট পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ গ্রামবাসীদের মতামত নিয়ে করা হবে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ আমাদের ভীষণভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছে।
ক্ষোভে ফুসছে সাধারণ মানুষ । গ্রাম বাসীদের অভিযোগ, পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, জব কার্ডধারীরা ১০০ দিনের কাজ করলেও বকেয়া টাকা মেলেনি। নতুন কাজও হয়নি। আবাস যোজনার ঘর নিয়েও চলেছে চরম বিনিয়ম। তৃণমূল ও বিজেপি একে অন্যের ঘারে দোষ দিয়েই খালাস।
গ্রামের মানুষ তাদের অভিজ্ঞতায় শাসকদলের লুটের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বাঁশের কঞ্চিতে লাল পতাকা লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝান্ডা। তিস্তা পাড়ে ১০ কিলোমিটার জুড়ে গাছে গাছে লাল পতাকা উড়ছে। এবার মুক্তি চান সাধারন মানুষ। মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি নয় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কখনোই না লাল ঝাণ্ডাই আবার বিকল্প হয়ে উঠেছে তিস্তা পারের এই ভূমিহীন মানুষগুলোর কাছে কাছে।

Comments :0

Login to leave a comment