Panchayat vote 2023

প্রত্যেক মৃত্যুর দায় মুখ্যমন্ত্রী, কমিশনের, বললেন সেলিম

কলকাতা

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নির্দেশে চলা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শনিবার তিনি বলেছেন, এত মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী চুপ করে আছেন কেন! এমনকি তৃণমূলের যে দুষ্কৃতীদের ভোট লুট করতে পাঠিয়েছিলেন তাঁদেরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্যও মুখ্যমন্ত্রী শোক প্রকাশ করতে পারছেন না! যারা তৃণমূলে আছেন তাঁরা এখনই এর থেকে যা বোঝার বুঝে নিন। এই নির্বাচনে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।
এদিন পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণে পুলিশি মদতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বোমা বন্দুক নিয়ে হামলা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যেভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইতে নেমেছিলেন তার জন্য তাঁদের কুর্নিশ জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, বাংলার মানুষ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়েছেন, জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়েছেন, আর আজকে পঞ্চায়েতের ভোটাধিকার রক্ষায় সেই গৌরবোজ্জ্বল লড়াইয়ের যথার্থ উত্তরসূরির ভূমিকা পালন করেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁরা যেভাবে লড়েছেন তাতে বাংলার নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সব অংশের মানুষকে এই লড়াইয়ের জন্য কুর্নিশ।
সেলিম বলেছেন, আগের রাত থেকে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে ব্যালট বাক্স বোঝাই করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে মানুষের ক্ষোভ সত্ত্বেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের টনক নড়েনি, ভোট কর্মীরা নিরাপত্তার অভাবে বিক্ষোভ দেখালেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যজুড়ে দৌরাত্ম্য চালিয়েছে শাসকদলের কর্মীরা। তবুও মানুষের প্রতিবাদী মেজাজকে দমানো যায়নি। লুটেরার দল বুঝে গিয়েছে নিজেদের পঞ্চায়েত গড়তে মানুষ দৃঢ় প্রত্যয়ী। আজ ছাপ্পা ভোটে বোঝাই অবৈধ ব্যালট বাক্সকে মানুষ পুকুরের জলে ডুবিয়েছে, আগামী দিনে এই ভোট চোরেদের ডোবাবে। 
এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বামফ্রন্টের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সেলিম বলেছেন, ভোটের দিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কত শতাংশ ভোট পড়ল তার খবর হয়। আজকে কমিশন ভোটের হার বলতে পারছে না, ১০-১২-১৪-১৬ ঘণ্টায় ঘণ্টায় কেবল মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যতজন মারা গেছে, এমনকি তৃণমূলেরও যারা মারা গেছে তাদেরও সবার মৃত্যুর জন্য দায়ী মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর নির্দেশে চলা রাজীব সিনহা। আমরা আগে থেকে বলেছিলাম, শান্তিতে ভোট নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। বামপন্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে কত রোবো কপ, র্যা পিড অ্যাকশন ফোর্স, জলকামান কত কিছু নামায়, কিন্তু ভোট লুটেরাদের ঠেকাতে ব্যবস্থা কই! নির্বাচন কমিশনার ভোটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে পাবলিকের টাকায় প্লেনে করে আনা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিয়েছেন, আর মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে খুনির ভূমিকা পালন করেছেন। ওঁকে তো গ্রেপ্তার করা উচিত! জনতার আদালতে এই সব চেয়ারলোভী দলদাসদের বিচার হবে। 
অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর, রাজ্য সরকারের পুলিশ দপ্তর এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন মিলিতভাবে সেটিং করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অব্যবহৃত করে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেছেন সেলিম। কেন বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়নি তা আদালতের দেখা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। আর রাজ্য পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন, দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে তারা কোনও বন্দোবস্ত করেনি, বরং উর্দি পরা গুন্ডার ভূমিকা পালন করেছে। আইপ্যাকের পরিকল্পনা মতো পুলিশ আর গুন্ডাবাহিনীকে দিয়ে তৃণমূল গণতন্ত্র হত্যা করতে নেমেছিল। কিন্তু হক আদায়ে অনড় বাংলার জনতা বুঝিয়ে দিয়েছে কোনও রাজ্যপাল, কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপরে তাঁরা নির্ভর করে নেই, জনতাই গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে।
গণনায় যাতে লুটের চেষ্টা সফল না হয় তার জন্য কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সেলিম বলেছেন, শাসকদলের হয়ে যাতে কারচুপি না হয়, তার জন্য নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে ভোটের হার প্রকাশ করুক। যেখানে ভোট লুট হয়েছে সেখানে অবিলম্বে পুনর্নির্বাচন ঘোষণা করুক। সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত হোক, সুরক্ষিত হোক ব্যালট বাক্স ও স্ট্রং রুম। গ্রাম বাংলার মানুষের অধিকার রক্ষায় রাজ্যের নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসুক। প্রতিটি মৃত্যুর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করুক। নির্বাচন পরবর্তীতে আর একটি প্রাণও যাতে না যায় রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশ তা নিশ্চিত করুক। 
লুট বজায় রাখতে শাসকদলের হিংসাত্মক আক্রমণের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে যারা ভোট পরিচালনা করেছেন এবং যে সাংবাদিকরা খবর তুলে ধরেছেন তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সেলিম।
 

Comments :0

Login to leave a comment