গত সোমবারই ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের তরফ থেকে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে নতুন কোচ কার্লো আন্সেলোত্তির নাম। আগামী ২৫মে রিয়ালের হয়ে শেষবার ডাগআউটে বসবেন কার্লো। ঐদিন একটি জমকালো বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চলেছে মাদ্রিদ। মাদ্রিদের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কোচ তিনি। ২০১৩তে মোরিনহোর পরিবর্তে কোচ হয়ে আসেন মাদ্রিদের। সেই সময় ' লা ডেসিমা ' র ( দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ) স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলেন সমস্ত মাদ্রিদিস্তারা। ২০০২ এর পরে বহু কোচ এসেও দিতে পারেননি রিয়ালকে সেই খেতাব। এই ইতিহাস সকলেরই জানা। আন্সেলোত্তির কোচিংয়েই ২০১৪তে দুটি ট্রফি জিতেছিল মাদ্রিদ। রোনাল্ডোর অনুপস্থিতিতে বার্সিলোনার বিরুদ্ধে কোপা দেল রের ফাইনালে বেলের সেই বিদ্যুৎ গতিতে গোলের কথা ভুলবে এমন ফুটবলপ্রেমী মানুষ খুঁজে পাওয়াই বিরল। কোপা দেল রে জয়ের পর ২৪মে তারিখটি সমস্ত মাদ্রিদিস্তাদের মনে মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিল চিরতরে। তবে সেই ম্যাচে প্রথমেই পিছিয়ে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকোর দিয়েগো গোদিনের গোলে। সেই গোল শোধ হয়েছিল রামোসের ৮৮মিনিটের সেই হেডারে। তারপর এক্সট্রা টাইমে আরো তিনটি গোল দিয়েছিলেন মার্সেলো , বেল এবং রোনাল্ডো। প্রায় ১২বছর পর দশম চ্যাম্পিয়ন্স এসেছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। কিন্তু তার ঠিক পরের বছরই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মাদ্রিদ। এরপর আবার তাকে কোচ করা হয় ২০২১সালে। ২০২২ এবং ২০২৪এ ফের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতান তিনি। এসি মিলান ও মাদ্রিদের হয়ে সর্বোচ্চ মোট ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব রয়েছে তারই নামে। তবে এই মরশুমে যেন তার পরিকল্পনা কোথাও একটা ধাক্কা খাচ্ছে। বার্সিলোনার কাছে বারংবার পরাজিত হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ এই মরশুমে । ছিটকে গিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং লালিগার জয়ের রেস্ থেকেও। গত বছর থেকেই তার সঙ্গে ব্রাজিল ফেডারেশন কথাবার্তা চালানো শুরু করেছিল। নিজেদের বর্ণময় ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার কোনো বিদেশী কোচকে দায়িত্ব দিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন ( CBF )। রিয়ালে ভিনি , রড্রিগো , মিলিটাওদের কাছ থেকে দেখেছেন এই আন্সেলোত্তি। এছাড়াও এই মরশুমে কাছ থেকে দেখেছেন রাফিনহাকে তার দলকে পর্যদুস্ত করতে। ফলে ব্রাজিল দল নিয়ে হোমওয়ার্ক অনেক আগে থাকতেই শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ১৪ম্যাচে ৩১পয়েন্ট নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ইতিমধ্যেই যোগ্যতাঅর্জন করে ফেলেছে ২০২৬বিশ্বকাপের। ব্রাজিল রয়েছে ২১পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে। আগামী ১১জুন কোরিন্থিয়ান্সে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের মাধ্যমেই পরীক্ষা শুরু হবে আন্সেলোত্তির। মূলত ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজাতে পছন্দ করেন তিনি। দুই উইংয়ের বড় ভূমিকা থাকে তার ট্যাকটিকসে । তবে ব্রাজিলের মূল সমস্যা হল মিডফিল্ডে সৃজনশীলতার অভাব। ছাড়াও আন্সেলোত্তি তার দলে নেইমার ও ক্যাসিমেইরোকেও ফিরিয়ে আনতে চান। রক্ষণে মিলিটাও , গ্যাব্রিয়েল , অগাস্টোর সঙ্গী হতে পারেন মারকুইনোস। দুই উইংয়ে ভিনি এবং রড্রিগো থাকতে পারেন। স্ট্রাইকারে আপাতত শুরু করতে পারেন এন্ড্রিক। পরবর্তীতে মিডফিল্ডে স্থান হতে পারে নেইমার ও ব্রুনো গুলমেইরোসের। এছাড়াও ফ্ল্যামেনগোর গার্সন ফুলহ্যামের পেরেইরা ও উলভসের মাথেউস কুনহাও রয়েছেন। ব্রাজিল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট এডনাল্ডো রড্রিগেজ বলেছেন ' আন্সেলোত্তি ফুটবল ইতিহাসের সর্বসেরা কোচ। এবার তিনি দায়িত্ব নিতে চলেছেন বিশ্বের সেরা জাতীয় ফুটবল দলের '। সমস্ত ব্রাজিলিয়ানদের মনের কথাই যেন প্রতিধ্বনিত করে এডনাল্ডো যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে আন্সেলোত্তির হাত ধরেই ব্রাজিলে বহু প্রতীক্ষিত সেই ' হেক্সা ' ( ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ) জয়ের স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল। আন্সেলোত্তি ব্রাজিল ফুটবলের সুদিন ফেরানো এবং নবজাগরণ ঘটানোর কান্ডারি হয়ে উঠতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার।
CARLO ANCELOTTI APPONTED AS A NEW MANAER OF BRAZIL
আন্সেলোত্তির হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় ব্রাজিল

×
Comments :0