লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি। লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আঘাত হানা হয়েছে। মুরিদকে বা ভাগলপুরের মতো সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটির নির্দিষ্ট জায়গাতেই আঘাত হানা হয়েছে। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ সেই লক্ষ্য অর্জন করা গিয়েছে।
রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে শীর্ষস্তরের সেনা আধিকারিকরা একথা বলেছেন। ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন রাজীব ঘাই বলেছেন যে দায়িত্বসম্পন্ন, পরিমিত এবং আগ্রাসনের জবাবে সঠিক মাত্রা বজায় রেখে চালানো হয়েছে ভারতের সামরিক অভিযান। ভারত উত্তেজনার মাত্রা বাড়ানোর মতো ভূমিকা নেয়নি।
বিমান বাহিনীর ডিজি একে ভারতী বলেছেন, কোথায় কোথায় আঘাত করা গিয়েছে তার প্রমাণ ভারতের হাতে রয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের একাধিক লক্ষ্যবস্তুর স্লাইড পেশ করেন তিনি। ছবি দেখিয়েই তিনি বলেন যে চেষ্টা চালালেও ভারতের বিমানঘাঁটির ক্ষতি করতে পারেনি পাকিস্তান। এদিনও ভারতীয় সেনা জানায় যে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষতি করার যে দাবি পাকিস্তান করেছিল তা একেবারেই বেঠিক।
চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ পেশ করার কথা ভারতের। সে কারণেও এই সাংবাদিক সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এক প্রশ্নে ভারতী বলেছেন, যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি হবে। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য সময়মতো পেশ করা হবে। ভারতের যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত তথ্য এখনই পেশ করার সময় নয়। তবে বায়ুসেনা সব পাইলটই ফিরে এসেছেন।
আরেক প্রশ্নে নৌসেনার ডিজি এএন প্রমোদ বলেছেন, সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো যুদ্ধের সম্ভাবনা রোধ করে শান্তি বজায় রাখা। ভারতীয় সেনা সেই দায়িত্বই পালন করেছে।
গত শনিবার ঘাইয়ের সঙ্গেই সংঘর্ষবিরতির কথা চূড়ান্ত হয় পাকিস্তানের ডিজিএমও কাসিফ আবদুল্লার। এই প্রসঙ্গে ঘাই বলেছেন, পাকিস্তানের দিক থেকেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছিল। তবে রাত ৭টা থেকে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন শুরু হয়। পাকিস্তানের সেনা তার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের চেষ্টা হলে যোগ্য জবাব দিতে তৈরি ভারত।
তিনি বলেন, যে কোনও আগ্রাসনের কড়া জবাব দেওয়া হবে। চিফ অব আর্মি স্টাফ তিন সেনাকেই পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। দেশের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঁচ নিহত সেনা এবং নিহত নিরস্ত্র নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঘাই। তিনি বলেছেন, ১০০-র বেশি সন্ত্রাসবাদী এবং অন্তত ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছে।
ঘাই বলেছেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাতের প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। অন্য কোনও ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই হয়েছে।
এয়ার মার্শাল একে ভারতী বলেছেন, আকাশপথে হামলা চালানোর পরও অপরপক্ষ যাত্রীবাহী অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উড়ান চালু রাখে লাহোর থেকে। অত্যন্ত সতর্কতা নিয়ে পালটা আঘাত হানা হয়েছে। যাতে কোনও যাত্রীবাহী বিমান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সেনা আধিকারিকরা বলেছেন যে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের লক্ষ্য প্রাথমিকভাবে ছিল না। ৬-৭ মে মধ্যরাতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতেই। ৯টি ঘাঁটিতে আক্রমণ হয়েছে। ২১টি ঘাঁটি চিহ্নিত। কিন্তু এরপর ৭-৮ রাত থেকে জম্মু, নাল, পাঠানকোট, ভাতিন্ডা, উত্তরলাইয়ের মতো বিমানঘাঁটিতে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে ড্রোন আক্রমণ। ছিল চালকহীন আকাশযান। সেই অবিরাম আক্রমণও রুখে দেওয়া গিয়েছে। এই পর্বে জবাব দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সামরিক কাঠামো, রাডার সিস্টেম এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানা হয়। ভারতী বলেন, ইসলামাবাদের কাছে চকললা, ভোলারি, জেকোবাবাদ বা মুরিদ, রফিকির পাশাপাশি ইউএভি বা চালকহীন আকাশযানের হ্যাঙার স্যাকারেও কার্যকরী আক্রমণ চালিয়েছে ভারত। পরিমিত প্রতিক্রিয়া চালানো হয়েছে এটা বোঝাতে যে আগ্রাসনের জবাব দিতে আমরা তৈরি।
নৌসেনার প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রমোদ বলেন, সব নৌঘাঁটিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। প্রয়োজনে করাচিতেও আঘাত হানা জন্য তৈরি ছিল নৌসেনা। পাকিস্তানের গতিবিধি নজর রাখা হয়েছে খুঁটিয়ে। দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন, মাত্রা সম্পন্ন, পরিমিত। সেনা এবং বিমানবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিকল্পনা নেয় নৌসেনা।
করাচি বন্দর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশের খবরে তীব্র সংশয় তৈরি হয়েছিল। এ সম্পর্কে এক প্রশ্নে প্রমোদ বলেন, কেবল এটুকুই বলা যায় যে সমুদ্রপথে পূর্ণ কর্তৃত্ব কায়েম করেছিল ভারত। অপরপক্ষের তৎপরতা বিবেচনায় ছিল। তাকে নিষ্ক্রিয় করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নে ঘাই বলেন, সংঘর্ষবিরতির মাঝে পাকিস্তান কী করবে তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। আমরা কী করব তা নির্দিষ্ট রয়েছে।
Presser Operation Sindoor
আক্রমণ নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই, হাতে রয়েছে প্রমাণ, জানালো সেনা

×
Comments :0