ভারত সামরিক পদক্ষেপ স্থগিত রেখেছে কেবল। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি বুঝে পাকিস্তানি সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছে সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণে এই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় বাইশ মিনিটের ভাষণে তিনি যদিও দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ায় আমেরিকার হস্তক্ষেপ সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি প্রসঙ্গেও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। যদিও এই পর্বে সব দলের অবস্থান এবং দেশবাসীর ঐক্যের প্রশংসা করেছেন তিনি।
মোদী বলেছেন, আজকের সময় যুদ্ধের নয়। আবার আজকের সময় সন্ত্রাসবাদেরও নয়। সন্ত্রাসবাদকে বিন্দুমাত্র বরদাস্ত না করার নীতিতেই বিশ্বের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে।
মোদী বলেছেন, সন্ত্রাস এবং আলোচনা, সন্ত্রাস এবং বাণিজ্য একসঙ্গে চলবে না। ‘পানি অর খুন’ একসঙ্গে বয়ে যেতে পারে না। মোদী আন্তর্জাতিক স্তরে বার্তা দিয়ে বলেন, দু’পক্ষে কথা হলে সন্ত্রাস নিয়েই হবে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই হবে। তিনি বলেছেন, ‘নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল’ কৌশল কাজ করবে না।
গত শনিবার বিকেল ৫টা থেকে সংঘর্ষবিরতি চালু হয় দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিজিএমও স্তরে বার্তালাপের পর। কিন্তু রবিবার আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সংঘর্ষ বিরতির কৃতিত্ব জাহির করত নেমে পড়েন। সেদেশের উপরাষ্ট্রপতি এবং বিদেশ সচিবরাও জানান যে দু’দেশের শীর্ষস্তরে সংঘর্ষ বিরতির জন্য কথা চালিয়েছেন তাঁরাই। ট্রাম্প বলেছেন, সংঘর্ষ বিরতি না মানলে ব্যবসা বন্ধের হুশিয়ারি দেয় আমেরিকা। বামপন্থীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অংশ তৃতীয় পক্ষের এই সক্রিয়তায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেই উদ্বেগ দূর করার চেষ্টাই করেননি জরুরি ভাষণে। গত ৬-৭ এপ্রিল মাঝরাতে ভারতের সামরিক অভিযানের পর এদিনই প্রথম প্রকাশ্যে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন মোদী।
মোদী বলেছেন, শান্তির রাস্তা তৈরি করতেও শক্তির প্রয়োজন। সব ভারতীয় যাতে শান্তিতে থাকে তার জন্য ভারতকে শক্তিশালীও হতে হবে। প্রয়োজনে শক্তির ব্যবহারও জরুরি। ভারত তা-ই করেছে। সেনাকে অভিবাদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গে মোদী বলেন যে পরিবারের সামনে, শিশুদের সামনে হত্যা চালিয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা। সন্ত্রাসবাদের বীভৎস চেহারা দেখিয়েছে। দেশের সম্প্রীতি ভাঙার চেষ্টাও ছিল।
সব রাজনৈতিক দল, সব অংশ একজোটে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি তুলেছে। আমরা সেনাকে ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি।
মোদী অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দাবি করে বলেছেন যে আজ সন্ত্রাসবাদীরা পরিণাম বুঝে গিয়েছে। ৬মে-৭মে পুরো দুনিয়া তা দেখেছে। ভারতের সেনা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঠিকানা, ট্রেনিং সেন্টারে নির্দিষ্ট আঘাত করেছে, যা তারা স্বপ্নেও ভাবেনি। সন্ত্রাসের ঘাঁটিতে ভারতের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা সন্ত্রাসবাদীদের নাড়িয়ে দিয়েছে। মোদী বলেন যে পাকিস্তানের বহওয়ালপুর বা মুরিদের হামলা বিশ্বস্তরে সন্ত্রাসবাদী হামলার একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ৯/১১ বা লন্ডনে টিউব রেল এবং ভারতে বহুবার আক্রমণের উৎস এই কেন্দ্রগুলি। ১০০-র বেশি সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে। এরা কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
মোদী বলেন যে পাকিস্তান হতাশ, নিরাশ হয়ে পড়ে। ফের দুঃসাহস করে। সন্ত্রাসের তদন্তের সহায়তার বদলে ভারতের ওপরই হামলা করে। আমাদের স্কুল, কলেজ, গুরুদোয়ারা, ঘরবাড়ি, মন্দিরকে লক্ষ্য করে হামলা, সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। দুনিয়া দেখেছে হামলার এই চেহারা। দুনিয়া দেখেছে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আকাশেই ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত, ড্রোনকে। ভারত প্রথম তিনদিনেই পাকিস্তানের যেভাবে ক্ষতি করেছে তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল।
সংঘর্ষ বিরতি প্রসঙ্গে মোদীর ব্যাখ্যা, পাকিস্তান বাঁচার চেষ্টা করতে শুরু করে। সারা বিশ্বে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল। ১০ মে পাকিস্তানী সেনা আমাদের ডিজিএমও-কে যোগাযোগ করে। ততক্ষণে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটির গুরুতর ক্ষতি করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান বলে সন্ত্রাসবাদী বা সৈন্যরা আর দুঃসাহস দেখাবে না। এই আশ্বাস আমরা বিবেচনা করি। আমরা সংঘাত কেবল স্থগিত করেছি। সামনের দিনে পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ হিসেবে রাখা হবে।
মোদী বলেছেন যে বিমানবাহিনী, পদাতিক সেনা এবং নৌসেনা, বিএসএফ, আধা সামরিক বাহিনী লাগাতার সতর্কতা জারি রেখেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘নতুন স্বাভাবিক’ অবস্থা তৈরি হয়েছে এই সংঘর্ষে। এক, সন্ত্রাসবাদী হামলা হলেই যোগ্য জবাব হবে। দুই, সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্ত করতে হবে। তিন, সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের আলাদা করে দেখা হবে না। তিনি বলেন, দুনিয়া পাকিস্তানের আসল চেহারা দেখেছে। নিহত সন্ত্রাসবাদীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন এদেশের সেনা আধিকারিকরা। রাষ্ট্রীয় মদতে সন্ত্রাসবাদের বড় প্রমাণ। আমরা দেশবাসীকে বাঁচাতে নির্ণায়ক অবস্থান নেব।
মোদী বলেন, বারবারই পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে ভারত। এবার নতুন নজির। নতুন যুগের সমরাস্ত্রে আমাদের কৃতিত্ব দেখিয়েছি। মেড ইন ইন্ডিয়া সমরাস্ত্রের পারদর্শিতা দেখেছি।
মোদী বলেন, আমাদের একতা সবচেয়ে বড় শক্তি। একজোট থাকাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
শান্তির রাস্তার জন্যও শক্তির প্রয়োজন। সব ভারতীয় যাতে শান্তিতে থাকে তার জন্য ভারতকে শক্তিশালীও হতে হবে। প্রয়োজনে শক্তির ব্যবহারও জরুরি। ভারত তা-ই করেছে।
Narendra Modi Ceasefire
সংঘর্ষ কেবল স্থগিত, সন্ত্রাসের গতিবিধিতে নজর, ট্রাম্প প্রসঙ্গে নীরব থেকে বললেন মোদী

×
Comments :0