ভ্রমণ
মুক্তধারা
খেরোর খাতায় ঔরঙ্গাবাদ
অভীক চ্যাটার্জী
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
কিন্তু এই দুর্গের বিশেষত্ব তার অধিকারে নয়, তার গঠনশৈলীতে। প্রথমত এটি আর পাঁচটা দুর্গের মত পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠে নি, পরিবর্তে গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। পাহাড়ের ভেতর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তার মধ্যে নির্মিত প্রকোষ্ঠ এবং সুড়িপথ এই দুর্গকে করে তোলে আরও বজ্র কঠিন এবং দুর্ভেদ্য।
এবার আসি এর নির্মাণ কৌশলের দিকে। প্রথমত একটা শঙ্কু আকৃতির পাহাড়, এবং তার পাথর মসৃণ। গা বেয়ে মাথায় ওঠা একদমই সহজ কথা নয়। তার উপর চারপাশে ঘুরে থাকা কুমিরে ভরা পরিখা। তারপর আসে বাইরের উঁচু প্রাচীর এবং প্রহরী মিনার। যা অনেক আগে থেকেই শত্রুর আগমনের এত্তেলা দিতে পারত। সেই প্রাচীর ও মিনার অতিক্রম করার পর আসে মধ্যবর্তী দুর্গ। যা মূলত ব্যবহার হতো সামরিক বাহিনীর জন্য। তোপখানা বা তিরন্দাজদের অস্ত্রসালা এবং তার সাথে কর সংগ্রহের কাজও এখন থেকে করা হতো। তারপর আসে অভ্যন্তরীণ দুর্গ। যেখানে থাকতেন মূলতঃ শাসক শ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা। আর একেবারে শেষে শীর্ষ দুর্গ, যেখানে থাকতেন রাজা রানী এবং তার ঘনিষ্ঠরা। এটি হলো দুর্গের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
পথ ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে আসে যত ভেতরে যাওয়া যায়। আমরা যাওয়ার পথ দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম বারে বারে। অন্ধকার গলি পথের ভুলভুলাইয়ায় মানুষ পথ হারাতে বাধ্য। অদ্ভুত ক্রূর এই দুর্গের গঠন এবং প্রতিরক্ষায় নিজেই নিজের সমকক্ষ। এর শীর্ষ দুর্গে পৌঁছতে সময় লাগে বেশ। তার উপর বৃষ্টি আমাদের অন্তরায়। সময় লাগলো অনেকটাই। উপর থেকে আওরঙ্গবাদ শহরটা দেখা যায় অনেক দূরে। তবে মেঘের জন্য আমরা সে ভাবে কিছু দেখতে পাইনি। তবে মেঘ আর সবুজ মিলে বেশ সুন্দর লাগছিল সে প্রেক্ষাপট।
নেমে আসলাম আমরা ধীরে ধীরে সেই সুড়ি পথ ধরেই, যে পথে এক কালে যাওয়া আসা করত বল্লমধারী প্রহরী। ভাবতেই একটা বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলাম দুজনেই। শেষে নিচে নেমে জল খেয়ে আমাদের অটোটাকে ডেকে এবার আমরা চললাম আরও এক অদ্ভুত সুন্দর শিল্পকর্ম দেখতে। যার নাম বিবি কা মাকবারা।
Comments :0