বড়দিনের উৎসবের সময় ভক্ত হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের আক্রমণ করছে, গির্জায়, স্কুলে, মলে, দোকানে, এমনকি বাড়িতে ঢুকে বড়দিনের সাজসজ্জা ভেঙে লন্ডভন্ড করছে, আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে তখন হিন্দু হৃদয় সম্রাট গুরু নরেন্দ্র মোদী রাজধানী গিয়ে প্রার্থনায় অংশ নিয়ে নিজেকে মহান সাজানোর নাটক করছেন। আর শান্তি, করুণা, আশায় ভরপুর এক বড়দিনের শুভেচ্ছাবাণী বিতরণ করছেন। এবারের বড়দিনে ভারতের খ্রিস্টান সমাজের কাছে এর চেয়ে বড় প্রতারণা ও রসিকতা আর কিছু হতে পারে না। এমন দ্বিচারিতা, এমন ভণ্ডামি মোদীর মতো আরএসএস’র প্রচারকের পক্ষেই সম্ভব।
বড়দিনের উৎসব এবং তার প্রস্তুতিতে সর্বত্র খ্রিস্টানরা গির্জায়, তাদের স্কুলে, বাড়িতে, পাড়ায় নানাভাবে সাজিয়ে তোলেন। এই সাজসজ্জা, এই উৎসবের আয়োজন, এই আনন্দ কোনোমতেই বরদাস্ত করতে রাজি নয় সঙ্ঘ পরিবারের চৌহদ্দিতে থাকা উগ্র হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা। প্রধানত বিজেপি শাসিত ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যগুলিতে জায়গায় জায়গায় উন্মত্ত গুন্ডারা জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে শুধু খ্রিস্টানদের উপর শারীরিকভাবে হামলা চালিয়েই হাত গুটিয়ে থাকেনি যাবতীয় সাজসজ্জা ভেঙে পুড়িয়ে তছনছ করেছে। বড়দিনের নানা উপকরণ যেসব দোকানে বিক্রি হয় হামলা হয়েছে সেখানেও। দোকান থেকে সেসব জিনিসপত্র বের করে এনে পুড়িয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ দলের সমাজবিরোধীরা।
আসামের নলবাড়িতে এই দুষ্কৃতীরা বড়দিনের আয়োজন তছনছ করে দিয়েছে। জব্বলপুরে গির্জায় হামলার পাশাপাশি বিজেপি নেত্রী এক দৃষ্টিহীন খ্রিস্টান মহিলাকে গালিগালাজ ও মারধর করে। দিল্লি বজরঙ দুষ্কৃতীরা বাড়িবাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় বড়দিনের অনুষ্ঠান না করার। গত কয়েকদিন ধরে এমন গুন্ডামি চলতে থাকলেও রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা একবারের জন্যও কেউ নিন্দা করেননি। সর্বত্র চলে নীরবতার মধ্য দিয়ে সমর্থন ও উৎসাহদানের বার্তা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দেখে শুনেও টু শব্দটি করেননি। বলেননি এটা অন্যায়, ঐতিহ্যবিরোধী। পুলিশও যথারীতি নিষ্ক্রিয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সামনেই এসব ঘটেছে। আবার অভিযোগ পেয়েও পদক্ষেপ নেয়নি।
কয়েকদিন আগেই ভারতের খ্রিস্টান সমাজের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় ২০২৪ সালে খ্রিস্টানদের উপর ৮৩৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এবছর নভেম্বর পর্যন্ত হামলা হয়েছে ৭০৬টি। মিথ্যা ও কল্পিত অভিযোগে এই হামলা চালানো হয়। অমিত শাহ এর কোনও জবাব দেননি। মোদীর মুখেও শোনা যায়নি কোনও আশ্বাসবাণী। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা খ্রিস্টানদের উপর হামলা-অত্যাচার চালাক কেন্দ্র-রাজ্য কোনও বিজেপি সরকারের কোনও দায় নেই। বরং সরকার ও দল নীরবে তাদের সমর্থন করে যাবে। আড়াল করবে, নিরাপত্তা দেবে। আর তাদের হৃদয় সম্রাট গির্জায় শান্তির বাণী বিতরণ করবেন।
Comments :0