Mid day meal

সেই তৃণমূল-যোগ,পড়ুয়ার চেয়ে সংখ্যা বেশি মিড ডে মিলের!

রাজ্য

স্কুলে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যার চেয়ে বেশি দেখানো হচ্ছে মিড ডে মিলের সংখ্যা। দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের মদতপুষ্ট মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দিকে।
রাজ্যে ৮ হাজার ৩০টি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে কমছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। অথচ মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। তবে এই পরিসংখ্যানের মধ্যে যে আসলের তুলনায় জলের ভাগই বেশি সেকথা সহজেই বোঝা যায় ২০২৪’র তুলনায় ২০২৫ সালে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলির প্রাথমিক স্তরে মিড ডে মিল গ্রাহকের সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে।
এরাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়নের সভাপতি সুনীল নাটির বক্তব্য, আগে প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ কর্তৃক বরাদ্দ যে টাকা মিড ডে মিলের বাজার করা থেকে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো সেই টাকার দায়িত্ব থাকত সেলফ হেলফ গ্রুপের হাতে। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, এখন থেকে রাজ্যের প্রত্যেকটি স্কুলের মিড ডে মিল সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে এবং সেই নথি দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন দু’জন করে ভারপ্রাপ্ত বা তত্ত্বাবধায়ক। তাঁরাই মিড ডে মিলের আর্থিক লেনদেন এবং বাজার খরচের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। আর এখানেই কাজ করছে শাসক দলের প্রভাব।
সুনীল নাটি এদিন বলেন, সেলফ হেলফ গ্রুপগুলির হাত থেকে দায়িত্ব চলে যাওয়ার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলীর মতো কিছু জেলায় ভারপ্রাপ্তরা উপস্থিত পড়ুয়ার সংখ্যা নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে বাড়িয়ে একটা ভুয়ো অঙ্ক অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে নথিভুক্ত করছেন বলে জানতে পারা যাচ্ছে। ‌অর্থাৎ অনেকক্ষেত্রেই এরকম করা হচ্ছে যে উপস্থিত পড়ুয়ার সংখ্যা যদি ১০০ জন হয়, তবে তত্ত্বাবধায়করা অনায়াসে ১৫০ জন ছাত্রের রান্না হয়েছে বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বাবধায়করা তৃণমূল সরকারের ঘনিষ্ঠ।  
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উল্লিখিত জেলাগুলির বেশ কিছু স্কুলে এরকম তৃণমূল সরকারের মদতপুষ্ট মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অন্তর্গত শিক্ষকদের ওপর প্রবল মানসিক চাপ তৈরি করছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাসন্তী, মথুরাপুরের মতো বেশ কিছু ব্লকের স্কুলগুলিতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বহুদিন যাবৎ বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও সেই শাসক অনুগামী শিক্ষকরা যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে কিন্তু মিড ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বাজার ও লেনদেন সংক্রান্ত কোনও তথ্যই ম্যানেজিং কমিটিকে জানানো হচ্ছে না কেবল তাই নয়, ম্যানেজিং কমিটি যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে না পারে সেই বিষয়েও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে শাসক দল। 
প্রসঙ্গত, লেনদেন সংক্রান্ত কারচুপির পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে পড়ুয়াদের পুষ্টিসংক্রান্ত দিকটিও। প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনার কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম মূল বিষয় হলো পড়ুয়াদের যথাযথ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের জোগান দেওয়া। কিন্তু মে মাসের আগে প্রাথমিক স্তরে প্রতি পড়ুয়ার মাথাপিছু ‌মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬ টাকা ২৯ পয়সা, যা গত মাসে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। 
এবিপিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল এই প্রসঙ্গে বলেন, যেখানে একটা ডিম কিনতেই ৬টাকা ৫০পয়সা লাগে, সেখানে প্রত্যেক ছাত্রের মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ টাকা ৭৮পয়সায় কীভাবে পুষ্টিকর খাবারের বন্দোবস্ত করা সম্ভব। এরপর জ্বালানি আছে, বাদবাকি খরচ আছে। তাঁর কথায়, মাথাপিছু অন্তত ১৫ টাকা হিসাবে বরাদ্দ করার জানানো হয়েছিল এবিপিটিএ’র তরফে। কিন্তু সে দাবিতে কর্ণপাত করেনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার।

 

Comments :0

Login to leave a comment