Left Front Terrorism

উন্মাদনা নয়, সন্ত্রাসবাদকে হারাতে জরুরি জনতার ঐক্য, বললেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ

রাজ্য কলকাতা

মঙ্গলবার বামপন্থী দশ দলের ডাকে মিছিলের পর শিয়ালদহে সভায় বলছেন মহম্মদ সেলিম। রয়েছেন বিমান বসু। ছবি ও ভিডিও: প্রিতম ঘোষ

অরিজিৎ মণ্ডল

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে হবে জনতার ঐক্যকে মজবুত করে। 
মঙ্গলবার কলকাতায় ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিলে এই স্লোগান তুলেছে দশ বামপন্থী দল। স্লোগান উঠেছে যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহমমদ সেলিম বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল বিভাজন। তা’হলে আরএসএস বা হিন্দুত্ববাদীরা যে বিভাজনের রাজনীতি করছে তাতে কার হাত শক্ত হচ্ছে? সে কারণেই আমরা জনতার ঐক্যের কথা বলছি।
বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু নিন্দা করেছেন সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো ভুয়ো অসত্য প্রচারের। যে প্রচারে উন্মাদনা বাড়ানো হয়েছে সমানে। 
বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে বিভাজনের রাজনীতি, বিদ্বেষের প্রচার সন্ত্রাসবাদকে শক্তিশালী করে। বিভাজন, বিদ্বেষের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে হবে। 
মিছিলের শেষে সংক্ষিপ্ত সভা হয়েছে শিয়ালদহে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে উঠেছে আওয়াজ। সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিপদ রয়েছে। কিন্তু তাকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না কেন। পহেলগামে জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে একজন নিরাপত্তা রক্ষীকেও মোতায়েন কার হয়নি কেন।
সন্ত্রাসবাদে বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছি। সেনাদের ভূমিকায় আমরা গর্বিত। কিন্তু এই সংঘাতকে ব্যবহার করে যে ভারত-পাকিস্তানের উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছে আমরা তার বিরোধী। এই যুদ্ধের খরচ জনতার টাকায় হবে। ডিজেলের দাম বেড়েছে। আমাদের থেকেই এই অর্থ আদায় করা হবে। মোদীর শাসনে ক্ষোভ বাড়ছে। সেই ক্ষোভকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন মোদী। এই চক্রান্তের দর্শক আমরা হতে পারি না। শান্তির পক্ষে কথা বললেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বলছে ‘দেশদ্রোহী’। আরএসএস নিজেই দেশদ্রোহী, সে অন্যকে কী সার্টিফিকেট দেবে? 
তিনি বলেন যে দেশের মানুষ যুদ্ধ চান না। চান কাজ, চাকরি, শিক্ষা। সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে দেশের সরকারকে।
আরএসপি’র দেবাশিস মুখার্জি বলেন, সর্বদলীয় বৈঠকে বামপন্থীদের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানকে সমর্থন দিলেন। প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে থাকলেন না। 
মুখার্জি বলেন, কাশ্মীরে নিরাপত্তা নেই কেন, এই প্রশ্ন উঠল। বিজেপি-আরএসএস যুদ্ধ উন্মাদনা ছড়াতে নামল। ভারত কিন্তু যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্ত করতে নামল। আমরা বলেছি সমস্যা থেকে যুদ্ধ করে মুক্তি মিলবে না। 
সভায় সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনও বক্তব্য রেখেছে। 
মহম্মদ সেলিম বলেন, দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক আমরা চাই। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ বরাবর সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধের বিরুদ্ধে। কিছু সংবাদমাধ্যমের মালিক উটলো পাঠ পড়াতে চাইছেন।
পহেলগামে হামলার পর আমরা মিছিল করে বলেছিলাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। 
সেলিম বলেন, নতুন দেশপ্রেমের পাঠ শেখাচ্ছে। ঐক্যের কথা বললেই আক্রমণ করা হচ্ছে। এখন তো প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে ঐক্য প্রয়োজন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল বিভাজন। তা’হলে আরএসএস বা হিন্দুত্বাবদীরা যে বিভাজনের রাজনীতি করছে তাতে কার হাত শক্ত হচ্ছে? 
সেলিম বলেন, অনেকে বলছেন শান্তির কথা, ঐক্যের কথা বলা যাবে না। ভারতীয় সভ্যতা গোটা বিশ্বকে শান্তির থা বলেছে। সেটি আমাদের শক্তি। সন্ত্রাসবাদ শান্তিকে বিঘ্নিত করতে চাইছে। যারা বলছে শান্তির কথা বলবেন না তারা তো সন্ত্রাসবাদের দোসর।
সেলিম বলেন, শান্তি কেন? কারণ বেকার যুবক বা খেতমজুর বা শ্রমিক- তাঁদের কোনও বিষয় উত্থাপিত হয় না যখন অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ত্রাসবাদ রোখার কথা বলে তো মোদী সরকারে এসেছিলেন। মিডিয়ার কাছে টিআরপি আসল কথা। আমাদের কাছে তা নয়। সবচেয়ে বড় অন্যায় মহিলাদের বিরুদ্ধে হয়েছে। নারীবিদ্বেষীরা জঘন্য কায়দায় চরিত্রহননের চেষ্টা করল। মিডিয়ার মালিক অপারেশন সিন্দুরের পেটেন্ট নিতে চলে গেল। যুদ্ধ ব্যবসায়ীরা দেখছে শেয়ার বাজার কতটা চাঙ্গা হচ্ছে। আর ট্রাম্প বলল, যুদ্ধ বন্ধ না করলে ব্যবসা বন্ধ। একইরকম ভাবে পাককিস্তানের মিডিয়াও উন্মাদনা ছড়িয়েছে।
সেলিম বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হলে মানবতা বিরোধী সব কাজের বিরোধিতা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আমাদের নিরীহ গ্রামবাসীরা মারা গিয়েছেন। সেনা নিহত। এরা বল এসেছে জাতীয় নিরাপত্তা। তা’হলে সে দায়িত্ব পালন কেন করা হচ্ছে না সে কথা সরকারকে জিজ্ঞেস করব না?   
সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি ভাঙার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। কিন্তু সর্বদল বৈঠকে সব দল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকে সমর্থন জানিয়েছে, এটি ভুলে যাবেন না।

Comments :0

Login to leave a comment