Editorial

গায়ে মানে না আপনি মোড়ল

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদীভুক্ত তথা বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরা মোদী কীর্তিগাথা উচ্চারণ করে প্রায়ই বলে থাকেন মোদীর কল্যাণেই নাকি বিশ্বজুড়ে ভারতের পরিচিতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মান-মর্যাদা বেড়েছে। কিন্তু কখনও ভুলেও উচ্চারণ করে না প্রতিবেশী দেশগুলি ভারতকে কি চোখে দেখে। গোলমাল সেখানেই। আত্মসুখ বিলাসী প্রধানমন্ত্রীর আত্মপ্রচার সর্বস্বতা এই বিভ্রান্তি অনেকের মনে জাগতেই পারে যে মোদী বুঝি বিশ্বমঞ্চে ভারতকে সত্যি সত্যি উচ্চাসনে বসিয়েছেন। অনেক বেশি দেশ এখন ভারতকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে ও অনুসরণ করে। কূটনৈতিক লড়াইয়ে ভারত অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। শুনতে বা ভাবতে যত ভালোই লাগুক না কেন বাস্তবটা আদৌ তা নয়। আপাতদৃষ্টি‍‌তে বহিরঙ্গে ভিন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ছবি দেখা গেলেও সেটা আদতে অনেকটাই ফাঁপা।


প্রবাদ আছে ‘চ্যারিটি বিগেন অ্যাট হোম’। খিড়কির দরজার ওপারে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে মোদী জমানায় ভারতের চার পাশে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত টলে গেছে। মোদীর রাজত্বে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। কয়েকদিন আগে বিদেশি এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন ডোকালাম সমস্যার সমাধানে শুধু ভারত, ভুটান নয় চীনের মতামতও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য। প্রায় ছ’বছর আগে ডোকালাম ভারত ও চীনের সেনাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ার সময়কার ভুটানের অবস্থানের সঙ্গে আজকের অবস্থান অনেকটাই বদলে গেছে। মার্কিন উপগ্রহের তোলা ছবি দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমে বারংবার প্রচার হয়েছে চীন নাকি ভুটানের ভূখণ্ড দখল করে আছে এবং ভুটানের অভ্যন্তরে নির্মাণ কাজ করছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে জানিয়ে দেন চীনে ভুটানের কোনও জমি দখল করেনি, নির্মাণ কাজও হয়নি। স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভারতের অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ দূরে সরে গেছে।


একই অভিজ্ঞতা নেপালের ক্ষেত্রেও। প্রভুত্ব করার মানসিকতা থেকে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। নেপালকে জব্দ করতে সীমান্তে অব‍‌রোধ হয়েছিল মোদী সরকারের মদতে। ক্ষুব্ধ নেপাল বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ে চীনের দিকে। স্বাধীনতার পর থেকে যে নেপাল ভারতের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল সেই নেপাল ভারতের তিনটি অঞ্চলকে তাদের সার্বভৌম অংশ বলে দাবি করে। অতীতে এমনটা কোনও দিন কল্পনাও করা যায়নি। আসলে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র ভাবনার অনুগামী মোদী সরকার দাদাগিরি করে সব প্রতিবেশীদের সমীহ আদায় করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের কাছে ভারতকে এক ঘরে করে ছেড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী দাবি করতে পারবেন না একটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক আগের থেকে ভাল হয়েছে। ‘শত্রু’ পাকিস্তানের সঙ্গে শত্রুতা বেড়েছে। চীনের সঙ্গে বিরোধ বে‍‌ড়েছে। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ভারতকে সত্যি সত্যিই এক ঘরে করে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদীরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment