Jadavpur University Ragging

পুলিশের বাধা ভেঙে এগল ছাত্ররা, স্লোগানে উত্তাল পথ

কলকাতা

 রাস্তার অনেকটা জুড়ে বিজেপি-র মঞ্চ গড়েছে। তার অনুমতি তাদের মিলেছে। যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের সরণির একদিক আটকে সভা তৃণমূলের। তারও অনুমোদন দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আটকে দেওয়া হয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির মিছিল। বৃহস্পতিবার যাদবপুরে। 
কিন্তু ছাত্রসমাজ যাঁদের পাশে, যাঁদের বুকে সহপাঠী খুনে ক্রোধ অকৃত্রিম, তাঁদের রোখে কে? 
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে গেল। পুলিশের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া ছাত্রী ফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। যে ছাত্র পড়ে গেছিল রাস্তায়, সে উঠে পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে দিল পাশে।
স্লোগানে স্লোগানে সোচ্চার হলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা। ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর খুনে যন্ত্রণাবিদ্ধ শহর শুনল ভবিষ্যতের প্রতিনিধিদের শপথ — ‘স্বপ্ন তুমি আমার ভাই, তোমার খুনের বিচার চাই।’
এদিন স্বপ্নদীপের খুনের বিচারের দাবিতে ও যাদবপুর সহ রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে র্যাচগিং বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বান জানায় এসএফআই সহ চারটি বামপন্থী সংগঠন। ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অনেক নাগরিক এই প্রতিবাদ মিছিলে ছিলেন। ঢাকুরিয়া হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছতেই মিছিল আটকায় পুলিশ। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়ে দেন তারা তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবেনই। তৃণমূলের দলদাস পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের। এরপরই বিরাট পুলিশ বাহিনী মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মিছিলকারীদের সঙ্গে চলে পুলিশের ধ্বস্তাধস্তি। তবে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় বামপন্থী ছাত্রকর্মী সমর্থকরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল পৌঁছয় ঘোষিত গন্তব্যে। সেখানে চলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ।
এদিন পুলিশের এই অতি সক্রিয়তায় ক্ষুদ্ধ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল, বিজেপি, আরএসএস-র প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তো এত তৎপরতা দেখায় না পুলিশ। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে পরিকল্পিত ছক কষেই তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী যখন এসএফআই কর্মীদের উপর হামলা চালায় সেই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোথায় পুলিশের তৎপরতা? যাদবপুর থেকে বামপন্থীদের বিচ্ছিন্ন করা, তৃণমূল, বিজেপি-আরএসএস-র  বাহিনীকে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাই বামপন্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এমন বাধা, হামলা আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
এদিনের প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছিলেন এসএফআই-র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান সহ এআইএসএফ, এআইএসবি, পিএসইউ-র নেতৃবৃন্দ।
প্রতিবাদ মিছিলে ছাত্রদের গলায় শোনা গেছে — ‘স্বপ্ন তুমি আমার ভাই, তোমার খুনের বিচার চাই’, ‘আমরা স্বপ্ন খুনের বিচার চাই’, ‘দোষীদের শাস্তি চাই, এ মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি মানছি না’। যাদবপুর সহ রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যা গিংমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্যও সুর চড়িয়েছেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা।
সৃজন ভট্টাচার্য এদিন আবারও দাবি তুলেছেন স্বপ্নদীপের খুনে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই হত্যা  নিয়ে রাজনৈতিক রুটি সেঁকা বন্ধ করুক তৃণমূল, বিজেপি। শুধু যাদবপুর নয়, রাজ্যেরর প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আ্যন্টি র্যা গিং স্কোয়াড তৈরি করে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চাইতেও এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বামপন্থীদের দিকে দোষারোপের ঢিল ছুঁড়ছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন একটা ছেলে অকালে হারিয়ে গেল। তাঁর ও তার পরিবারের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। এই যন্ত্রণাদায়ক ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে বামপন্থীদের দিকে ঢিল ছুঁড়ছেন। এটা লজ্জার। আমাদের সাফ কথা, দোষীদের আড়াল করা যাবে না। কঠোর শাস্তি দিতেই হবে। এদিন ৮বি মোড়ে প্রতিবাদসভা করে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। সভায় সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক উর রহমান সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 
photo

 

Comments :0

Login to leave a comment