নতুনপাতা : গল্প
মানু ভাকেরের ফ্যান
সৌরীশ মিশ্র
১
"এনেছেন?"
"হ্যাঁ দাদা। এই দেখুন। পাওয়াই যাচ্ছিল না। অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি। ভীষণ ডিমান্ড এখন মার্কেটে, দাদা।"
"হবে না ডিমান্ড! কৃতিত্বটা দেখতে হবে তো।"
"তা তো বটেই। তা তো বটেই।"
"ঠিক আছে। দিয়ে দিন প্যাক্ করে।"
দোকানদার খবরের কাগজের একটা পাতা দিয়ে রোল্ করে মুড়িয়ে দিলেন চিরদীপবাবুকে জিনিসটা।
দাম মিটিয়ে কাঁধে ঝোলানো তাঁর ঝোলা-ব্যাগটায় ঢোকালেন চিরদীপবাবু সেটা। তারপর, পা বাড়ালেন তিনি বাড়ির দিকে।
২
"চূর্ণী কোথায়?" বাড়িতে পা দিয়েই স্ত্রীর কাছে মেয়ের খোঁজ করলেন চিরদীপবাবু।
তাপ্তীদেবীকে কিছু বলতে হোলো না। কারণ, "এই তো আমি বাপি।" বলতে বলতে পড়ার ঘর থেকে ঐ ঘরে এক প্রকার ছুটেই ঢুকল চিরদীপবাবুর বছর বারোর মেয়ে।
"এই দ্যাখ্ তোর জন্য কি এনেছি।" চিরদীপবাবু তাঁর ব্যাগ থেকে খবরের কাগজে মোড়ানো জিনিসটা বের করে হাতে দেন মেয়ের।
"কি এটা বাপি?"
"দ্যাখ্ না খুলে।"
চূর্ণী মোড়কটা খুলে জিনিসটা চোখের সামনে দু'হাতে মেলে ধরতেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার।
"মানু ভাকেরের পোস্টার!"
"হ্যাঁ রে। তুই সেদিন বলছিলিস না, অলিম্পিকে ওঁর পারফরম্যান্স দেখে তুই ওঁর ফ্যান হয়ে গেছিস। তাই তোকে দিলাম। পছন্দ হয়েছে?"
অলিম্পিক মেডেল গলায়, এবারের প্যারিস অলিম্পিকে শুটিং-এ জোড়া পদকজয়ী মানু ভাকেরের হাসি-হাসি মুখের ছবিটা তখনও দু'চোখ ভরে দেখছিল চূর্ণী। এবার সে তাকায় ওর বাবার দিকে। বলে,, "দারুণ পোস্টারটা বাপি। একেবারে দারুণ।" আর বলতে বলতেই চিরদীপবাবুকে জড়িয়ে ধরে সে।
"আরে, ছাড়্, ছাড়্। অফিস থেকে ফিরলাম। জামা-কাপড়ে ঘাম, রাস্তার ধুলো..."
"তাতে কি! তুমি তো আমার বাপি।" বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিরদীপবাবুকে চূর্ণী।
চিরদীপবাবু অনুভব করেন তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছে।
Comments :0