Ssc scam

পার্থর বাড়িতেই চাকরি বিক্রির অফিস

কলকাতা

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে বসেই চলত চাকরি বিক্রির অপারেশন! 
আলিপুরে সিবিআই’র বিশেষ আদালতে এমনই অভিযোগ এবার সিবিআই’র। গ্রুপ-সি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এদিনের সওয়ালেই তৃণমূল আমলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ ছবি আরও একবার সামনে এল।
আদালতের সওয়ালে সিবিআই’র অভিযোগ, ‘খোদ পার্থ চ্যাটার্জির বাড়িতে বসেই চলত এই কারবার। যারা টাকা দিয়েছে সেই অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা এখান থেকেই এসএসসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হতো। সিবিআই’র আইনজীবী এদিন শুনানিতে পার্থ চ্যাটার্জির জামিনের আবেদন খারিজ করে দাবি করেন, ‘তদন্তে একের পর এক তথ্য সামনে আসছে। পার্থ চ্যাটার্জি মন্ত্রী হিসাবে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত এই কেলেঙ্কারিতে। তাঁর নাকতলার বাড়িতে বসেই লিস্ট তৈরি করতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। নাকতলার বাড়িতে বসেই নিয়োগের তালিকা তৈরি করতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাড়ির একতলায় একটি অফিস বানিয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে ডেকে তালিকা দিতেন তিনি। মূলত যাদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে জেলায় জেলায় বিভিন্ন এজেন্টদের মাধ্যমে তাঁদের নামের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হতো সুবীরেশ ভট্টাচার্যের কাছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়িতে যেতেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংহও।’
এই দুজনেই মিডলম্যান হিসাবে এই চাকরি বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করত। সিবিআই গত আগস্ট মাসে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে। রীতিমতো ‘ক্যান্ডিডেট’ জোগাড় করে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কাজেই যুক্ত ছিলেন ধৃত প্রসন্ন রায়। বিনিময়ে এই মিডলম্যান বা নিয়োগকাণ্ডে অভিযুক্ত দালাল প্রসন্ন রায় যে সম্পত্তি করেছিলেন তাতে চক্ষু চড়কগাছ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের। নিউটাউন থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তাঁদের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন পার্থ চ্যাটার্জি। তার কাছেই চাকরি পিছু ১০-১২ লক্ষ টাকা দিতে হতো। সেই টাকার সিংহভাগ অংশ ভাগ ভাগ করে পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট মহলে। এই প্রসন্ন রায় নামে মিডলম্যানের অধীনে আরও কয়েকজন দালাল কাজ করত জেলায় জেলায়। তাঁদের কাছে ছিল ‘ক্যান্ডিডেট’ জোগাড় করে আনা, তাঁদের কাছ থেকে টাকা বের করার ব্যাপার নিশ্চিত করা। নারকেলডাঙায় একটি ছোট্ট  ভাড়া বাড়িতে থাকতেন প্রসন্ন রায়। সেখান থেকে এখন থেকে নিউটাউনের বিলাসবহুল রাজকীয় ফ্ল্যাট। দীঘা, থেকে মন্দারমণি প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে লজ, হোটেল। একাধিক দামি গাড়ি। একাধিক জমি। এই ব্যক্তির গাড়ির ব্যবসাও ছিল আগে। এসএসসি ভবনে ভাড়া খাটত সেই গাড়ি। প্রসন্নের গাড়ি চড়তেন শান্তিপ্রসাদ সিনহাও। নিউটাউনে একটি আবাসনে ফ্ল্যাট আছে প্রসন্ন রায়ের। সেই আবাসনের পুজোয় গিয়েছিল পার্থ চ্যাটার্জিও।
সিবিআই’র দাবি, তদন্তে একাধিকজনের জেরা থেকেই জানা গেছে নাকতলার বাড়ির একতলায় অফিস ঘরেই যাতাযাত ছিল ধৃত ঐ দুই এজেন্টদের। সেখান থেকে তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হতো সুবীরেশ ভট্টাচার্যের কাছে।
কার্যত পার্থ চ্যাটার্জির  বাড়িতেই খোলা হয়েছিল চাকরি বিক্রির অফিস, দাবি সিবিআই’র। যদিও পালটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়ি হাই সিকিউরিটি জোন, রেজিস্টারে সই করতে হয়, কোথায় নাম? কোথায় রেজিস্টার?
এর আগে গত ৭ আগস্ট শুনানিতে পার্থ চ্যাটার্জি মমতা ব্যানার্জির দিকেই ঘুরিয়ে আঙুল তুলে অভিযোগ করেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই, নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট যেত মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই। মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের দিকেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির দায় ঠেলে দেন পার্থ চ্যাটার্জি! স্বাভাবিকভাবেই এরপরে শাসক তৃণমূলের তরফেও পার্থ চ্যাটার্জিকে আক্রমণ করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আবার এদিন পার্থ চ্যাটার্জি মুখ্যমন্ত্রীকে আড়াল করে বলেন, ‘আমি বিনীতভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বলতে চাই আইনগুলো একটু ভালো করে পড়তে হবে। দুম করে মন্ত্রীকে ধরে নিয়ে আসা হলো। মন্ত্রীর এখানে কোনও ভূমিকা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নেই, মন্ত্রীরও নেই। এরা কেউ এক্সিকিউটিভ ফাংশন করে না। এরা পলিসি মেকার্স।’ 
সিবিআই’র তরফে আদালতে সওয়ালে স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়, পরিকল্পনামাফিকই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে নিয়োগ করা হয়েছিল। সিবিআই’র আইনজীবীর কথায় দুর্নীতির এই নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে পদে বসানো হয়েছিল। আর এরপরেই পার্থ চ্যাটার্জির তরফে দাবি করা হয় তিনি মন্ত্রী হওয়ার আগেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে এসএসসি’র চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী সরকারের অন্য কোনও মাথা পরিকল্পনা করেই সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে পদে বসিয়েছিলেন?
 

Comments :0

Login to leave a comment