CORRUTION TO BE UPROOTED

দুর্নীতিবৃক্ষের শিকড় উপড়াতে হবে

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাজ্যে একের পর এক বৃহৎ দুর্নীতিকাণ্ড প্রকাশ্যে এসেছে, মানুষ চমকে উঠেছেন দুর্নীতির বহর দেখে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিগুলির এক অদ্ভুত প্রবণতা। তারা দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেবল চুনোপুঁটিদেরই গ্রেপ্তার করছে, এমনকি আদালতে চার্জশিট দাখিলের সময়েও কেবলমাত্র চুনোপুঁটিদেরই নাম রাখছে, রাঘববোয়ালরা থাকছে বাইরে। অথচ দুর্নীতির ঘটনাগুলির বহরই প্রমাণ করে যে রাজ্যের শাসকদলের বড় বড় মাথাদের অংশগ্রহণ ছাড়া এমন দুর্নীতি ঘটা সম্ভব ছিল না। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সিবিআই এবং ইডি কেবলমাত্র দুর্নীতি বৃক্ষের পাতা ছাঁটার কাজে নেমেছে। বৃক্ষের কাণ্ডে কোপ মারার কোনও লক্ষ্মণ তারা দেখাচ্ছে না। 
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু এমন দুর্নীতি যে কোনও একজন বা দুইজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়, সরকার ও প্রশাসনের উচ্চমহলের আরও বড় সংযোগ ছাড়া অবৈধ নিয়োগ সম্ভব ছিল না, তা শিশুরাও বোঝে। গত বছরের জুলাই মাসে ইডি’র তরফে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয়। সেই চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় রয়েছে অভিষেক ব্যানার্জির নাম নেই। ‘সুজয় ভদ্র সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জির আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করতেন। সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োয়ের ক্ষেত্রে কালীঘাটের কাকুর মারফতই অপারেশন কে চালাতেন তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। সেই চার্জশিটেই জানা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঢুকেছিল অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডে। তারপরেও চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে নেই অভিষেক ব্যানার্জির নাম নেই। এরপর কয়লা পাচারের তদন্তেও একই ঘটনা। কোভিড মহামারীতে সেই লকডাউনের সময়তেই ১০৯ দিনে ১৬৮ কোটি টাকা পাচার হয়। দৈনিক ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা! স্রেফ ভাউচারে সই করে মিলেছিল এই বিপুল পরিমাণ টাকা। ইডি’র সূত্র বলছে, তার সিংহভাগ টাকাই বর্তমানে ফেরার, প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপরাষ্ট্রের বাসিন্দা বনে যাওয়া অভিষেক ঘনিষ্ঠ বিনয় মিশ্রের নির্দেশে হাওলার মাধ্যমে যায় ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী ও শ্যালিকার অ্যাকাউন্টে। এই বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়েছে ২০২০ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এরপরেও অভিষেক ব্যানার্জির নামে এখনও চার্জশিট পেশ করতে পারেনি সিবিআই। 
সাদা চোখে জনগণ যা বুঝতে পারছে, আদালত সেটাই আইনগত দিক থেকে প্রশ্ন হিসাবে তুলেছে। গত মঙ্গলবার আসানসোল বিশেষ আদালত কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই’র তদন্তের ঢিলেমি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মঙ্গলবারই কয়লা পাচার মামলায় চূড়ান্ত চার্জ গঠন হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। সিবিআই’র ঢিলেমি তার অন্যতম কারণ। ক্ষুব্ধ বিচারপতির প্রশ্ন কতদিনে তদন্ত শেষ করবেন? শেষ পর্যন্ত শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৩ জুলাই। অর্থাৎ ভোট শেষ হয়ে নতুন সরকার গঠনও হয়ে যাবে ততক্ষণে। তারপর চূড়ান্ত চার্জ গঠন হবে। সপ্তম দফা ভোটের আগে সুযোগ পেয়েও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কয়লা কাণ্ডের চার্জ গঠন পিছিয়ে দিতে চাইলো কেন? নির্বাচনী পর্বে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে বোঝাপড়ার ফলাফল স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি অতি তৎপর হয়ে নির্বাচনের আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারে, কিন্তু এরাজ্যের শাসকদলের মাথাদের বেলা যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও সেই তৎপরতার ভগ্নাংশও দেখা যায় না। কারণ বিজেপি চাইছে না, তৃণমূলের বিষাক্ত দুর্নীতি বৃক্ষের মূল কাণ্ড ধরে নাড়ানাড়ি করতে। তারা কেবল পাতা ছাঁটছে, জনগণের সামনে উভয়ের মধ্যে নকল যুদ্ধ দেখাতে, ভোটের ভাগাভাগি করে নিতে। এই অবস্থায় বাংলার মানুষই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। দুর্নীতি বৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলতে ইভিএমে রায় দেবেন তাঁরা।

Comments :0

Login to leave a comment