মুক্তধারা
গল্প
গোধূলিবেলার স্বপ্ন
-----------------------------
পল্লবী আদক
-----------------------------
৯ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
বিগত সংখ্যার পর
ওর পরিবারে আগে কেউ কখনও প্রেম করে বিয়ে করেনি।ছোটবেলা থেকে ও খুব ঘরোয়া প্রকৃতির ছিল।যে কেউ দেখলে বলে দেবে যে,এই মেয়ে আজকালকার দিনের মেয়েদের মত নয়।ও নিজেও মনে মনে ভেবেছিল প্রেম নামক কোনকিছুর সাথে নিজেকে কখনো জড়াবে না।বাড়ি থেকে যেই ছেলেকে ঠিক করে দেবে,ও সেই ছেলেকেই সানন্দে গ্রহণ করবে।
সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে যায়।মানুষের মনোভাব ও বদলে যায়।ওদের পাড়াতেই পার্থর মামারবাড়ী যেহেতু, সেহেতু পার্থ মামারবাড়ী এলেই ওকে দেখতে পেতো ।কখনও ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাচ্ছে,আবার কখনও বা বন্ধুদের সাথে গল্পঃ করতে করতে টিউশন এ যাচ্ছে।ওর প্রতি একটা ভালোলাগা বোধ কাজ করত পার্থর।বলাবাহুল্য,ওর জন্যই পার্থ মাঝে মাঝেই মামারবাড়ী আসত।শুধুমাত্র ওকে দেখবে বলে।ওর সঙ্গে কথা বলার অনেক চেষ্টা করত।কিন্তু না!!সে মেয়ে কিছুতেই কথা বলত না।পার্থ দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন ,স্মার্ট ছিল।বন্ধুরা যখন দেখত পার্থ ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে, কোচিংয়ের বাইরে ওকে দেখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে,তখন ওরা নিজেই বন্দিতা কে বলতো " তোর কি কপাল রে বন্দিতা!এইরকম সুদর্শন দেখতে ছেলে তোর সাথে কথা বলার জন্য পাগল!!অথচ তুই ওকে পাত্তাই দিচ্ছিস না! তোর জায়গায় আমি হলে এতক্ষণে আমাদের প্রেম পর্ব শুরু হয়ে যেতো।ছেলেটা কিন্তু সত্যিই তোকে খুব ভালবাসে।শুধু তোকেই দেখে,আমাদের দিকে কোনোদিন ই তাকায় না।"। বান্ধবীর বলা এই কথায় বন্দিতা মুখে বিরক্ত প্রকাশ করলেও,মনে মনে ওর নিজেরও পার্থর প্রতি আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করে।
স্কুলজীবনে এইভাবে চলার পর কলেজ জীবনে পদার্পণ করলো বন্দিতা।নতুন অনেক বান্ধবী হলো ওর। তাদের সবার জীবনেই প্রেমিক ছিল। বন্দিতার সামনে তারা তাদের প্রেমিকের গল্পঃ করত অবসর সময়ে ।বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে ফেসবুকে নিজের ছবি দিয়ে অ্যাকাউন্ট পযন্ত তৈরি করলো বন্দিতা।সেই অ্যাকাউন্টে সর্বপ্রথম পার্থর নামটিই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে প্রবেশ করলো।অ্যাকসেপ্ট করবে না করবে না করেও,অবশেষে অ্যাকসেপ্ট করেই ফেলল।সঙ্গে সঙ্গেই পার্থর মেসেজ এলো।"কেমন আছো?কোন কলেজে ভর্তি হলে?বাড়ি থেকে আর বেরউ না কেনো??"।
প্রথমে ও কোনো রিপ্লাই করলো না।কিন্তু পার্থর তরফ থেকে আরও অনেক মেসেজ ঢোকার পর ,শেষমেশ ও রিপ্লাই করতে বাধ্য হলো।
এইভাবে কথা বলা শুরু হলো ওদের।তারপর আসতে আসতে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। তবে,এই বন্ধুত্ব আর প্রেমের মাঝে সময়টা বেশী ছিল না।খুব তাড়াতাড়ি ই বন্ধুত্ব হওয়ার পরে,পার্থর প্রেমে সারা দিয়েছিল বন্দিতা।
ওরা প্রথম দুজনে দেখা করেছিল এক নদীর পারে।পার্থর বাইকের পিছনে বসে,ওর কাঁধে হাত রাখা, এসবের মধ্যে দিয়ে একটা আলাদা ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করছিল বন্দিতার মধ্যে।সেদিন দীর্ঘক্ষণ দুজনে একে, অপরের হাতে হাত রেখে গল্প করেছিল।সেদিন বন্দিতার মনে হয়েছিল এইরকম সুন্দর সময় আগে কেনো আসেনি!!সময়টা এখানেই থেমে যাক!
পার্থ পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিল।বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করত।টাকার অভাব ও ছিল না। তাই প্রেমের উপহার হিসেবে অনেক কিছু দিতে চাইতো কিন্তু বন্দিতা তা গ্রহণ করতে পারত না।একটাই কারণ ' বাড়িতে কি বলব! কে দিয়েছে এত দামী জিনিস!'
রেস্টুরেন্ট,পার্ক, সবজায়গাতেই ঘোরাফেরা হলো ওদের। গোটা কলেজলাইফ টা এইভাবে মহা আনন্দে কেটে গেলো।তবে, ঘুণাক্ষরেও ওর এই প্রেমের কথা বাড়িতে কাউকে জানতে দিলো না ও।মনে মনে খুব ই ভয়ে ছিল যদি কখনও কেউ ওদের প্রেমের কথা জেনে ফেলে!!আর ভবিষ্যতের চিন্তা করতে গিয়ে তো প্রায় কেঁদেই ফেলত মেয়ে।ও তো মুখ ফুটে প্রেমের কথা বলতে পারবে না কোনোদিন,তাহলে বিয়ে যদি বাড়ির লোক অন্য জায়গায় ঠিক করে!!
সত্যিই হলো ও তাই।ওর প্রেমের কথা কেউ জানতে না পারায় বাড়ি থেকে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েই গেলো।আর মাত্র কয়েকদিন হাতে গোনা।তারপর ও অন্য কারুর হয়ে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতেই একটা রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো।
যেদিন নিজের বিয়ের কথা পার্থ কে জানালো বন্দিতা,পার্থ সেদিন নির্বিকার ছিল।কোনো কথা বলেনি।কেঁদে কেঁদে ও বলেছিল "আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,আবার বাবা মায়ের মুখের উপরেও কিছু বলতে পারব না।কি করব আমি এখন।!!" এই কথা শুনে পার্থ কোনো উত্তর পযন্ত করেনি।তারপর থেকেই ছেলেটার ফোন অফ।নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে বন্দিতার।
চলবে
Comments :0