রামশঙ্কর চক্রবর্ত্তী: পাঁশকুড়া
পাঁশকুড়ায় ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদ সভায় পুলিশের বাধা। ফতোয়া রাস্তার উপর জমায়েত চলবেনা। প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হন। চলে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ। বৃহস্পতিবার পুলিশের এমন আচরন বিস্মিত করেছে পাঁশকুড়ার বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি পাঁশকুড়ার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে কর্মী সাপ্লাই করা বেসরকারি কোম্পানির ফেসিলিটি ম্যানেজার জাহির আব্বাস খান ওয়ার্ড গার্লকে ধর্ষণ করে। এই ব্যক্তি আবার এলাকার তৃণমূল নেতা। আগে এই হাসপাতালেরই একাধিক মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীকে ধর্ষণ করেছে এই জাহির আব্বাস বলে অভিযোগ ছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। দিনের পর দিন জাহিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া কর্মীরা সহ নির্যাতিতা মহিলা অভিযোগ দায়ের করার পর বিক্ষোভে সামিল হয় হাসপাতালেই। বাধ্য হয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা এই জাহির আব্বাস খানকে। এই ঘটনার জানার পরেই বামপন্থী ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠন বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল। ডেপুটেশন দেওয়া হয় হাসপাতালের আধিকারিকে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীর কঠোর শাস্তি, হাসপাতালের আধিকারিকদের পদত্যাগ সহ একাধিক দাবিতে এদিন প্রতিবাদ মিছিল ও সভা হয় পাঁশকুড়া ব্লক বামফ্রন্টের উদ্যোগে। কয়েকহাজার মানুষ সামিল হয়েছিলেন এদিনের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। পাঁশকুড়ার পিডব্লিউডি ময়দান থেকে, ক্যানেল পাড়, থানা, পাঁশকুড়া বাজার হয়ে পৌরসভার সামনে পর্যন্ত মিছিল হয়। কয়েকহাজার প্রতিবাদী মানুষের জমায়েতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পাঁশকুড়া কোলাঘাট সড়ক। এমন জমায়েত দেখে কার্যত তৃণমূল নেতাদের মতো আচরণ করে পুলিশ। পাঁশকুড়া থানার কয়েকজন আধিকারিক এসে জানান রাস্তার উপর জমায়েত চলবে না। প্রতিবাদ করেন সাধারণ মানুষ। বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বাদানুবাদ হয় পুলিশের। জনস্রোতের এমন প্রতিবাদে কার্যত পিছু হটে পুলিশ। পাঁশকুড়া পৌরসভার সামনেই সভা হয়। বক্তব্য রাখেন সুজন চক্রবর্ত্তী, নিরঞ্জন সিহি, মধুজা সেনরায়, প্রতিকুর রহমান, সায়ন ব্যানার্জী, সিপিআর’র নির্মল বেরা, আব্দুল হাই প্রমূখ। সভাপতিত্ব করেন ইব্রাহিম আলি। ছিলেন মহাদেব মাইতি, পরিতোষ পট্টনায়েক, সেক সাহাজুদ্দিন, নিতাই সন্নিগ্রাহী, নাজির হোসেন, সিপিআই’র নবেন্দু ঘড়া সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মিছিল চলাকালীন এক প্রতিনিধিদল নির্দিষ্ট দাবিগুলির ভিত্তিতে ডেপুটেশন দেন পাঁশকুড়া থানায়।
সভায় সুজন চক্রবর্ত্তী বলেন ‘‘মানুষের হয়ে প্রতিবাদ বামপন্থীরা করে। পুলিশ বাধা দিচ্ছে কেন? পশ্চিমবঙ্গ ধ্বংস হচ্ছে। স্কুল, লেখাপড়া বিপর্যস্ত, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোয়া কলকাতা ডুবছে, মানুষ মরছে তখন মুখ্যমন্ত্রী গান শোনাচ্ছেন। বিজেপি শাসিত হাতরাস উন্নাওতে যেমন মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা, তেমনি পশ্চিমবঙ্গেও একই অবস্থা। আরজিকর হাসপাতালের ঘটনায় বিচার নেই। দোষীদের আড়াল করে প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলা দিচ্ছে পুলিশ। আরজিকরের পর আবার পুনরাবৃত্তি। এই পাঁশকুড়ায় এক তৃণমূল নেতা ধর্ষণ করেছে। তাকে নিয়োগ করেছিল কে? তার মাথার উপর হাত কার? কোন মন্ত্রী আর তার ছেলের মদতে এই জাহির আব্বাস খানের এত দৌরাত্ম্য? কার্যত পাঁশকুড়ার এই হাসপাতালের অলিখিত সুপার হয়েছিল এই তৃনমূল নেতা। এই ঘটনা যদি আড়াল করা চেষ্টা হয় তার সব হিসাব লালঝান্ডা বুঝে নেবে। পুলিশকে দিয়ে চমকে ধমকে কোনও লাভ হবেনা। এটা যেন তৃণমূল বুঝে নেয়। পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা চলছে বামপন্থীদের উপর। লালঝান্ডার মিছিল এখন পুলিশকে দিয়ে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। আর যেখানেই এমন কাজ করছে সেখানে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে পিছু হটছে।’’
Comments :0