কেন্দ্রে বিজেপি সরকার; প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তর প্রদেশেও বিজেপি সরকার; মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় উত্তর প্রদেশে চলছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার। ভক্তদের মতে রাম রাজত্ব। এহেন রাম রাজত্বে সনাতনী কুলদীপ সেঙ্গার ছিলেন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি’র বিধায়ক। প্রবল প্রতাপশালী এবং প্রভাবশালী এই বিধায়কের হাত এতটাই প্রলম্বিত যে প্রশাসন, পুলিশ সর্বত্র তাঁকে সমীহ করে চলে। যা খুশি তাই করুন, চরমতম অপরাধ করুন প্রশাসন-পুলিশ সদা সর্বদা তাঁর নিরাপত্তায় তৈরি। জন প্রতিনিধি বিধায়কের কাছে সাধারণ মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে সাহায্যের জন্য যান। সেঙ্গারের কাছেও গিয়েছিল হত দরিদ্র পরিবারের এক নাবালিকা তরুণী. তরুণীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে যোগী-মোদী-অমিত শাহের দলের বিধায়ক নানা প্রতিশ্রুতি, সাহায্যের কথা বলে দিনের পর দিন ধর্ষণ করতে থাকেন। অবশেষে একদিন তরুণী বুঝে যায় বিধায়কের আসল মতলব। কিন্তু জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার সাহস হচ্ছিল না। বিধায়কের শেষ কথা কেউ জানলে গোটা পরিবারকে খুন করে ফেলা হবে। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মেয়েটি পুলিশের কাছে যায় বিচার চাইতে। পুলিশ তার আবেদন গ্রাহ্য করেনি। উলটে তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু নাছোড় মেয়েটি বারবার থানায় যেতে থাকলে পুলিশ মিথ্যা মামলা সাজিয়ে মেয়েটির বাবাকেই জেলে পোরে। মেয়েটি তখন বিচার চাইতে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু পুলিশ ত্রি সীমানায় তাকে ঢুকতে দেয়নি। অগত্যা মেয়েটি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই গায়ে আগুন দেয় আত্মহত্যা করার জন্য। সে যাত্রায় আধপোড়া অবস্থায় বেঁচে গেলেও পুলিশি হেপাজতে থাকা তার বাবার মৃত্যু হয় অস্বাভাবিকভাবে। সন্দেহের তির ছোটে সেঙ্গারের দিকেই। এইভাবে একের পর এক খুন হয়ে যায় মেয়েটির পরিবারের অন্যরা। অর্থাৎ ধর্ষক সেঙ্গারকে রক্ষা করতে প্রশাসনের মদতে ও নিষ্ক্রিয়তায় গোটা পরিবারটাকেই শেষ করার নিখুঁত ষড়যন্ত্র চলে। যোগী-মোদীর নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী রামরাজত্বের এটাই মহিমা।
অনেক টালমাটাল অবস্থার পর সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। জেলে থাকা অবস্থায় যোগী সরকার তার রাজকীয় বন্দোবস্ত করে দেয়। নানা অজুহাতে মাঝে মধ্যে জেলের বাইরে কিছুদিন কাটানোর সুযোগও তিনি দিব্যি পেয়ে যান। সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট তার যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা সাময়িক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ধর্ষিতার মনে। অসহায় মেয়েটি আশঙ্কা করছে যে কোনও সময় তাকে মেরে ফেলা হতে পারে।
মোদীর বিকশিত ‘হিন্দু ভারতের’ এই হিন্দু মেয়েটি নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ও নিরাপত্তার জন্য ছুটে গেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কাছে। অনুরোধ করেছে একজন ভালো উকিলের ব্যবস্থা করে দিতে এবং কংগ্রেস শাসিত কোনও রাজ্যে থাকার বন্দোবস্ত করে দিতে।
Editorial
মোদীর আদর্শ ভারত
×
Comments :0