অরিজিৎ মণ্ডল: বর্ধমান
‘‘নব্য ধনী এবং লুম্পেন। গ্রামাঞ্চলে এই অংশ একদিকে বেলাগাম পয়সা কামাচ্ছে। আরেকদিকে ধুয়ো দিচ্ছে বিভাজনের রাজনীতিতে। এই অংশই মূলত তৃণমূলের মদতদাতা, সরাসরি বিভিন্ন স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্তও।
কৃষকসভাকে আজকে এদের বিরুদ্ধে লড়াই গড়তে হচ্ছে গ্রামের গরিব মানুষের ঐক্য গড়ে।’’
বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দানে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্মেলন ঘিরে আয়োজিত সমাবেশে এমনই অভিজ্ঞতা জানালেন হুগলীর আরামবাগের কৃষকনেতা উত্তম সামন্ত। কৃষকসভার সদস্য বিগত ৩০ বছর। রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধিও।
শুক্রবার সমাবেশ থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য সম্মেলন। বক্তব্য রাখবেন প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার, সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণণ, সহসভাপতি এবং রাজস্থানের শিকরের সাংসদ অমরা রাম। বক্তব্য রাখবেন দেশের কৃষক আন্দোলনের নেতা হান্নান মোল্লাও। সভাপতি বিপ্লব মজুমদার।
সম্মেলনের আগে চার জায়গা থেকে এসেছে মিছিল। ডিওয়াইএফআই পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি রক্তদান শিবির করছে সমাবেশ চলাকালীন। উদ্বোধন করেন হান্নান মোল্লা। সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাপতি চন্দন সোম, সম্পাদক শুভাশিস মৈত্র।
বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দানে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন প্রতিনিধিরা। সামনে ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে মিছিল। বাউল সঙ্গীত হয়েছে।
ছাত্র-যুবরা গান বেঁধেছে। ঐক্যের কথা, একজোটে দাবি আদায়ের কথা আছে।
ফসলের দাম, হিমঘরের ব্যবস্থা, কৃষি উপকরণ সুলভে সরবরাহের দাবি তুলেছে কৃষকসভা। রাজ্যে তৃণমূলের শাসনে সার, বীজ, কীটনাশকে চরম কালোবাজারির বিপদ শেষ করে দিচ্ছে কৃষককে, বলেছে সংগঠন। তুলেছে খেতমজুরের সরকার নির্ধারিত মজুরি নিশ্চিত করার দাবি। সেই দাবিতে হয়েছে প্রচার আন্দোলন।
উত্তম সামন্ত বললেন, ‘‘সাতাত্তরের আগে বিভিন্ন বেনামি জমিতে স্থায়ীভাবে বর্গাদারদের চাষের অধিকার দিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। এলাকায় এলাকায় কৃষকসভা লড়াই সংগ্রাম করে বেআইনি দখলে থাকা জমি ছিনিয়ে গরিব কৃষকের হাতে দেয়।। এর ফলে শ্রেণি ঐক্য তৈরি হয়েছি। আজকে লড়াইয়ে বিপদ বিভাজনের রাজনীতি। এই বিপদ আল ধরে মাঠ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। একদিকে বিজেপি-আরএসএস আরেকদিকে তৃণমূল হাওয়া দিচ্ছে।’’
তিনি জানাচ্ছেন, মজুরির দাবি রয়েছেই। আরামবাগ খানাকুল, পুরশুড়া, গোঘাটে বড় দাবি বন্যা প্রতিরোধ বড় বিষয়। কংসাবতী শিলাবতী ও নিম্ন দামোদরে বর্ষায় ভয়াবহ পরিস্থিতি। তার জন্য ঘাটালে বাঁধ নির্মাণ। কেবল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাবি নয়। তিনি বলছেন এই দাবি হুগলীরও।
বর্ধমান আউশগ্রাম থেকে সুনীল হেমব্রম। তিনি প্রায় পঞ্চান্ন বছর কৃষকসভার সঙ্গে যুক্ত। কৈশোর থেকে। আটাত্তরের লড়াই সংগ্রাম দেখেছেন।
তিনি বলেছেন, গ্রামের পর গ্রাম কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়ে যুক্ত হয়েছে শ্রেণি সংগ্রামে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা কৃষক সম্মেলনের প্রস্তুতিতে প্রচার করেছেন।
সুনীল হেমব্রম বলেছেন, হিমঘর দখল করে নিচ্ছে তৃণমূল লুম্পেনরা। এরাই কালোবাজারি করে। মাইক্রোফিনান্সের থাবা মারাত্মক। সরকারি সমবায় এবং ব্যাঙ্ক ঋণ না পেয়ে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন। ট্রাক্টর নেই অনেকের। সাতশো টাকা ঘন্টায় ছিল। এখন ১৩-১৪শো টাকা ঘন্টা। অনেকক্ষেত্রে তেলের দাম আলাদা দিতে হয়।
Comments :0